উত্তর বাড্ডা: সেহরির পর না ঘুমিয়ে দাঁড়াতে হয় পানির লাইনে
১১ মে ২০১৯ ১০:২১
ঢাকা: চলছে রমজান মাস। ভোররাতে সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ পরে যখন ঢাকার অন্য সব এলাকার মানুষ ঘুমাতে যান ঠিক তখন উত্তর বাড্ডার তেতুলতলা বাজার এলাকার মানুষ বাড়ি থেকে বের হন মগ-বালতি বা জার নিয়ে। ওয়াসার পাম্পের সামনে বসানো নলকূপের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে দিন শুরু হয় তাদের।
গত একমাস ধরে এই এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা ওয়াসার সরবরাহ লাইন থেকে একফোঁটা পানিও পাচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষকে দুইবার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে মেলেনি কোনো প্রতিকার।
তীব্র পানি সংকট মোকাবিলায় এলাকার মসজিদ রোডে ওয়াসার পাম্পের সামনে বসানো হয়েছে দুটি নলকূপ। সেখানে ভোর পাঁচটা থেকে পানি পাওয়া যায়। ফলে, প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে পানি সংগ্রহ করেন স্থানীয়রা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানি সংকট মোকাবিলায় ওয়াসা তাদের সঙ্গে উদাসীন আচরণ করছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাড়িওয়ালা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরও পানির সংকট হয়েছিল, তবে সেটা এতটা তীব্র হয়নি। কলে পানি নেই, আমাদের টয়লেটে যেতে হলেও নলকূপ থেকে পানি এনে সাত তলায় ওঠাতে হয়। আমার বাসায় যারা ভাড়া থাকতেন, তাদের অনেকে চলে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছে। রান্না করার জন্য পানি কিনতে হচ্ছে। ওয়াসার গাফিলতির কারণেই আমাদেরকে এসব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।’
অথচ উত্তর বাড্ডাতেই এমন অনেক বাসা আছে যেখানে পানির কোনো সংকট নেই বলেও জানান তিনি।
তবে যেসব বাড়িতে পানির সংকট নেই সেখানে আবার সমস্যাটা ভিন্ন। লাইনের সেই পানিতে এতো দুর্গন্ধ যে ফুটিয়েও সেই পানি পান করা যায় না। গোসল, ধোয়া মোছার কাজও করা যায় না। ফলে তাদেরকেও শেষ পর্যন্ত পানির খোঁজে বাড়ি থেকে বের হতেই হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, স্বাধীনতা সরণী, পূর্বাচল এবং হাজীপাড়া পাম্প থেকে পানি আসে উত্তর বাড্ডা এবং বাড্ডা এলাকায়। এ কারণে এলাকাটিতে পানির প্রাবল্য অনেক কম।
শফিকুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় সারাবাংলাকে বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওয়াসার প্রকৌশলী ক্ষিতিশ চন্দ্রকে এলাকার ৭২ জন বাসিন্দার স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই মারা যান ক্ষিতিশ চন্দ্র। ফলে সে দফায় পানির সমস্যার সমাধান হয়নি। গত এপ্রিল মাসে প্রকৌশলী ইকরামুল ইসলামকে আবারও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরেও কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে ওয়াসা বিষয়টি নিয়ে আদৌ ভাবছে কি না সে নিয়েই এখন সন্দিহান ওই এলাকার বাসিন্দারা।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ওয়াসার পানির লাইন লেভেল নয়। এ কারণে রাস্তার পাশের বাড়িগুলোতে পানির কোনো সংকট হয়নি। তবে আমরা যারা ভেতর দিকে বাস করি তাদেরকে এক মাস ধরে ভয়াবহ পানি সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে সারাবাংলার পক্ষ থেকে ওয়াসার উপ সহকারী প্রকৌশলী হীরক আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি পানির লাইনের অসমতার অভিযোগটি স্বীকার করে নেন। বিষয়টি সমাধান করার জন্য ওয়াসা চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও গরমের কথা উল্লেখ করে হীরক আল মামুন বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে কিন্তু উৎপাদন বাড়েনি। এই এলাকায় পানি সংকটের এটিও একটি বড় কারণ। এছাড়া রোজার সময় এমনিতেও বেশি পানির প্রয়োজন পড়ে। তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’
বাড্ডা ইউনিয়ন বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার শেখ সেলিম। পানি সংকটের কারণে প্রতিদিন গোসলও করতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকাবাসীকে একটু ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করেন তিনি।
শেখ সেলিম বলেন, ‘পানি সংকটের একজন ভুক্তভোগী আমিও। পাশের প্রকৌশলীদেরকে নিয়মিত ফোন দিয়ে এটি সমাধান করার তাগাদা দিচ্ছি। ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন পাম্প বসাতে পারলে এই সমস্যা থাকবে না। পানি সংকট নিরসনে আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হবে।’
অন্যদিকে, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয়দের পানি না দিয়ে জারে ভরে তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে ওয়াসার কিছু অসৎ কর্মকর্তা। এটিকে মাধ্যম করে মোটা অংকের অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
তবে স্থানীয়দের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওয়াসা প্রকৌশলী হীরক আল মামুন।
সারাবাংলা/টিএস/এসএমএন