জঙ্গি প্রতিরোধে আবারও ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহে জোর ডিএমপির
১১ মে ২০১৯ ১৮:৩৩
ঢাকা: দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে মত দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের ওপর আবারও জোর দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১১ মে) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে এক নিয়মিত ক্রাইম কনফারেন্সে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। কনফারেন্সে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তারা জানান, ডিএমপি কমিশনার তার বক্তৃতায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম পূরণ কার্যক্রম আগের মতো চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো দিনক্ষণ দেখে এটা হালনাগাদ করা চলবে না। প্রতিদিন অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ফরম পূরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।’
কমিশনার পুলিশ কর্মকর্তাদের আরও বলেন, ‘ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকার সব বাড়িতে গিয়ে এই তথ্য ফরম পূরণ করতে হবে। কোনো বাড়িই যেন বাদ না পড়ে।’
ভাড়াটিয়া স্থান পরিবর্তন করলে বাড়িওয়ালারা থানায় তথ্য জানাচ্ছেন কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এমন নির্দেশনা দিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কোনো কোনো থানা এটা করছে না, যা ঠিক নয়।’ সঠিক তদারকির মাধ্যমে ভাড়াটিয়া তথ্য আপডেট করার জন্য জোর নির্দেশনা দেন কমিশনার। একই সাথে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও বেশি এগিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
কনফারেন্সে কমিশনার সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশংকা নিয়েও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। জঙ্গিদের প্রতিরোধে ডিএমপি থেকে নেওয়া গণসংযোগ সপ্তাহ পালন সফল হওয়ায় কমিশনার কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দেন। এসময় তেজগাঁও বিভাগ, লালবাগ বিভাগ, মিরপুর ও গুলশান বিভাগকে ‘শ্রেষ্ঠ গণসংযোগ সপ্তাহ পুরস্কার’ দেওয়া হয়।
নিয়মিত এই মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে রমজানে ঢাকার যানজট নিয়েও আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘রমজানে এতো প্রতিকূল পরিবেশের পরও মানুষ বাসায় পৌঁছে ইফতার করছে, এটা নিঃসন্দেহে সফলতা। রোজার আগে সঠিক পরিকল্পনার ফলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।’
ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সদস্যদের যোগ করায় বাড়তি সফলতা এসেছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের নিরলস পরিশ্রমের ফল এটি।’ এই সফলতা আগামী ঈদ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলেই পুরো টিম সফল হবে বলে আশা করেন কমিশনার।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্রাইম কনফারেন্সের আলোচনায় ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ ও যানজট প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়া রুটিন মাফিক কিছু কাজ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কিভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকে তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন কমিশনার।’
মাসুদুর রহমান আরও জানান, কনফারেন্সে ঈদের সময় রাজধানী নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ২০ রমজানের পর আরেকটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই বিস্তারিত আলোচনা করে নিরাপত্তার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অভিযান চালায়। অভিযানের পর বেরিয়ে আসে, ওই এলাকায় সীমানা জটিলতার কারণে অনেক দিন ধরেই ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ করা হচ্ছে না। ফলে কোন বাসায় কে থাকছে, কে আসছে আর কে যাচ্ছে তা কারও জানা নেই। পুলিশও বিষয়টিতে মাথা ঘামায়নি। যার ফলে সেখানে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলা সহজ হয়েছে বলেই মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এসব কারণেই এবারের কনফারেন্সে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারী একাধিক কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/ইউজে/এমও