আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ঈদের পর বৈঠক
১২ মে ২০১৯ ১০:২৮
ঢাকা: বাংলাদেশ কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের তালিকা দিলেও নানা অজুহাতে বারবার প্রত্যাবাসন পিছিয়েছে মিয়ানমার। প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের দেওয়া প্রথম ব্যাচের তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে। মিয়ানমারের আপত্তি জানানো ওই রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানে ঈদের পরপরই কক্সবাজারে ঢাকা-নেপিডো বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার (১১ মে) শরণার্থী, ত্রাণ এবং প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সারাবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত ৩ মে (শুক্রবার) মিয়ানমারসৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠক নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিডোকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে, সে বিষয়ে দুই পক্ষ বৈঠক করে সমাধানে আসতে পারে। ঢাকার এই প্রস্তাবে সম্মতি জানায় নেপিডো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, মিয়ানমারের যাচাই-বাছাইয়ে আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানের জন্য দুই পক্ষের সম্মতিতে বৈঠকটি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে। শরণার্থী, ত্রাণ এবং প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম মূলত এই বৈঠকের বিষয়টি সমন্বয় করবেন। এছাড়া শরণার্থী, ত্রাণ এবং প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার বৈঠকের সময় জানালেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিকে জানানো হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢাকার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি নেপিডো
শরণার্থী, ত্রাণ এবং প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘এই রমজানের মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এর মধ্যে এই বৈঠকের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেব। ঈদের পরপরই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।’
এদিকে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গত ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে গত ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নেপিডোর সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ‘৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ তবে চুক্তির পর প্রায় দেড় বছর পার হলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বারবার এড়িয়ে গেছে মিয়ানমার।
আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শিগগিরই ঢাকায় বৈঠক
জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে জানিয়েছে যে প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক নয়।
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করেছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন বলেও আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমও
ত্রাণ এবং প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শরণার্থী