বুদ্ধ পূর্ণিমায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা
১৩ মে ২০১৯ ০১:৫৬
ঢাকা: বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় সারাদেশে সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই সাথে সারাদেশের বৌদ্ধ মন্দিরসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছে। রোববার (১২ মে) রাতে পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশ্বস্ত সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ১৮ মে বুদ্ধ পূর্ণিমায় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে এই হামলা চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতরের গোপনীয় শাখা থেকে এক চিঠিতে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে সতর্কতা জারি ও নিরাপত্তা জোরদার করেছে। শনিবার (১১ মে) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে সারাবাংলাকে বলেন, জঙ্গি হামলার হুমকি আছে। তাই সারাদেশে আমরা বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি মন্দিরে ইউনিফর্মের পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালন ও বৌদ্ধদের সঙ্গে সার্বক্ষনিক আলোচনা করে তাদের সাহস ও উৎসাহিত করার জন্য বলা হয়েছে।
কেনো এই হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে—জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, যেহেতু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি বড় অনুষ্ঠান আর শ্রীলঙ্কার ঘটনার পর সেখানকার পরিস্থিতি জঙ্গিদের উৎসাহ দিতে পারে। তাই জঙ্গিদের হুমকি আমরা কোনোভাবেই উড়িয়ে দিচ্ছি না। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ধর্মীয় উৎসব ভিত্তিক জঙ্গি হামলার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় দুটি হামলার ঘটনায় এমন আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। জঙ্গি সংগঠনগুলো কিছু দিন ধরে তাদের নিজস্ব অনলাইন সাইটে পুলিশ, বিশিষ্টজন ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই বলে কোনো হুমকিই পুলিশের পক্ষ থেকে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
সূত্র আরও জানিয়েছে , পুলিশ সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি ও পুলিশের জঙ্গি বিশেষজ্ঞ টিমগুলো এ নিয়ে কাজ করছে। ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সারাদেশে পুলিশের সতর্ক বার্তায় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সময় নিজ নিজ নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রত্যেক থানা এলাকায় বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন, পুলিশের টহল বৃদ্ধি, সন্দেহভাজনকে তল্লাশী ও নজরদারিতে রাখা। মন্দির এলাকায় সিসি ক্যামেরা সচল রেখে নিয়মিত নজরদারি করা এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার কথাও বলা হয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগনের সাথে পরামর্শ করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাতে বলা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি পুলিশিং ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তা নিতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে।
সারাবাংলা/ইউজে/আরএসও