সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণ অভিযোগে ফের তদন্ত শুরু
১৩ মে ২০১৯ ১৬:৫৫
উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ফের তদন্ত চালু করেছে সুইডেনের পাবলিক প্রসিকিউশন। ধর্ষণের অভিযোগকারীর আইনজীবীর এক আবেদনের ওপর ভিত্তি করে এই তদন্ত চালু করা হয়েছে। সোমবার (১৩ মে) এক ঘোষণায় একথা জানান দেশটির ডেপুটি প্রসিকিউটর ইভা-ম্যারি পারসন। খবর বিবিসির।
সুইডেনে করা ওই ধর্ষণ মামলা প্রায় এক দশক ধরে ঝুলে ছিল। ২০১০ সালে দুই সুইডিশ নারী ওই মামলা করেছিলেন। দুই বছর আগে সুইডিশ প্রসিকিউটররা এই অভিযোগে চলমান তদন্ত বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সেসময় জানিয়েছিলেন, অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রিত থাকা অবস্থায় তাদের পক্ষে এই তদন্তে অগ্রগতি করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: ‘শরণার্থী’ অ্যাসাঞ্জকে ধরিয়ে দিলো ইকুয়েডর
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে গত মাস পর্যন্ত লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রিত অবস্থায় ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু গত মাসে তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে তাকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইকুয়েডর। এর আগে ১ মে জামিন নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫০ সপ্তাহ কারাদণ্ড দেন লন্ডনের একটি আদালত। তিনি ধর্ষণের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন- অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সচল হতে পারে সুইডেনের ধর্ষণ মামলা
এদিকে, অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতারের পর থেকেই ধর্ষণের অভিযোগে ফের তদন্ত চালুর আবেদন জানিয়ে আসছিলেন অভিযোগকারী নারীর আইনজীবী। অবশেষে সোমবার সুইডেনের ডেপুটি প্রসিকিউটর ইভা-ম্যারি পারসন এক ঘোষণায় জানান, আমি আজ পুনরায় তদন্তটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ঘটনা এখনো সম্ভবপর কারণ রয়েছে যা থেকে সন্দেহ করা যায় যে, অ্যাসাঞ্জ ধর্ষণ করে থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন- জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করায় যুক্তরাজ্যে অ্যাসাঞ্জের ৩৫০ দিনের জেল
তবে অ্যাসাঞ্জের সাম্প্রতিক গ্রেফতার ও এর কয়দিন পরেই ওই তদন্ত ফের চালু হওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। উইকিলিকসের বর্তমান এডিটর-ইন-চিফ ক্রিস্টিন রাফসন বলেন, তদন্তটি ফের চালু করার জন্য সুইডেনের ওপর ব্যাপক রাজনৈতিক চাপ দেওয়া হয়েছে। তবে আদতে, এই ঘটনা ঘিরে সবসময়ই রাজনৈতিক চাপ বজায় ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল অ্যাসাঞ্জের
অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস গোপন মার্কিন গোপন নথি প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছিল ২০১০ সালে। তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্র। সে বছরই দুই সুইডিশ নারীকে যৌন হয়রানির (সম্মতিমূলক কিন্তু অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের) অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ডিসেম্বরে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করা হয় লন্ডনে এবং জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে তাকে নজরবন্দি করে রাখার নির্দেশ আদালত।
আরও পড়ুন- যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে গ্রেফতার করা হয় অ্যাসাঞ্জকে
জামিন পেলেও অ্যাসাঞ্জ আশঙ্কায় ছিলেন তাকে জোরপূর্বকভাবে সুইডেন বা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। এজন্য ২০১১ সালে অ্যাসাঞ্জ আপিল করেছিলেন যাতে তাকে সুইডেনের কাছে প্রত্যর্পণ করা না হয়, তবে আদালত তা খারিজ করে দেন। রায়ের প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য থেকে সুইডেনে বা যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হতে পারে আশঙ্কায় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে ২০১২ সালের জুন মাসে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
আরও পড়ুন- অ্যাসাঞ্জকে বের করার কারণ গুপ্তচরবৃত্তি ও শারীরিক অসুস্থতা!
সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতার এড়াতে তৎকালীন ইকুয়েডর প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেরা তার দেশের লন্ডন অ্যাম্বাসিতে ২০১২ সালে অ্যাসাঞ্জকে থাকার সুযোগ করে দেন। সে থেকেই লন্ডনের ইকুয়েডর অ্যাম্বাসিতে শরণার্থীর আশ্রয়ে থাকছেন অ্যাসাঞ্জ। প্রায় সাত বছর ধরে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে শরণার্থীর আশ্রয়ে ছিলেন তিনি।
তবে ইকুয়েডরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলায়। বর্তমান ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি গত মাসে অ্যাসাঞ্জের শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেন। ফলস্বরূপ ১১ এপ্রিল দূতাবাস থেকে তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাজ্য পুলিশ। পরবর্তীতে জামিন শর্ত ভঙ্গের দায়ে গত ১ মে তাকে ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/আরএ