শ্রীলংকায় মুসলমানদের ওপর হামলা, সারাদেশে কারফিউ
১৪ মে ২০১৯ ১০:১৯
শ্রীলংকায় দেশজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। হামলা হচ্ছে মসজিদে ও মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে। এখন পর্যন্ত এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এক ব্যক্তি। এ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে সোমবার (১৩ মে) রাতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছিল সরকার। খবর বিবিসির।
গত মাসে ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকায় চার গির্জা ও তিন হোটেলসহ মোট আট জায়গায় বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলায় প্রাণ হারায় অন্তত ২৫০ জন মানুষ। হামলার দায় স্বীকার করে আইএস। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হামলা চালিয়েছে স্থানীয় দু’টি চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন। ওই হামলার পর থেকেই দেশটিতে মুসলিমদের ওপর স্থানীয়দের সহিংসতা শুরু হয়েছে ও তা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (১৩ মে) একাধিক শহরে কয়েকশ’ মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গাবাজদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে তাদের।
শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ স্থানীয়দের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এই অস্থির পরিস্থিতি গত মাসের হামলার ঘটনা নিয়ে চলমান তদন্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি এক টুইটে বলেন, আমি সকল নাগরিককে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা ভুয়া তথ্যে প্রভাবিত হবেন না। নিরাপত্তাবাহিনী নিরলসভাবে হামলার জন্য দায়ী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে ও দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার সাত ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছিল শ্রীলংকা সরকার। স্থানীয় সময় রাত নয়টা থেকে কার্যকর হয় এই কারফিউ। তবে কারফিউয়ের মধ্যেও ঘটেছে হামলার ঘটনা। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কিনিয়ামায় এক মসজিদের জানালা ও দরজা ভাংচুর করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি কোরআন ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে মেঝেতে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই মসজিদের নিকটবর্তী একটি খালে অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি চালানোর পর স্থানীয়দের একটি দল মসজিদটির ভেতরেও তল্লাশির দাবি করে। কিন্তু সেনারা তেমনটি না করায় তারা নিজেরাই এসব সহিংস কার্যক্রম চালায়।
এদিকে, ক্যাথলিক সংখ্যাগরিষ্ঠ চিলাও শহরে মুসলিম-মালিকানাধীন দোকান ও মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ফেসবুকে শুরু হওয়া এক বিতর্কের জের ধরে এই হামলা চালানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ৩৮ বছর বয়সি এক মুসলিম ব্যবসায়ীর এক পোস্ট নিয়ে ফেসবুকে বিতর্ক শুরু হয়। ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পুত্তালাম জেলায় স্থানীয়রা এক মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা চালিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয় ব্যবসায়ীর।
হাত্তিপোলা শহরেও ঘটেছে হামলার ঘটনা। সেখানে অন্তত তিনটি মুসলিম-মালিকানাধীন দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, শ্রীলংকায় মুসলিমরা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম।
সারাবাংলা/আরএ