Wednesday 09 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফারাক্কা দিবস আজ, পানিশূন্য হচ্ছে উত্তরবঙ্গ


১৬ মে ২০১৯ ১৪:৩৬ | আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ১৪:৪০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহী: ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ছিল রোববার। সেদিন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ডাকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লাখো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন রাজশাহী মাদরাসা ময়দানে। ‘মরনফাঁদ ফারাক্কা ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও’ স্লোগানে তারা ভারতের ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেছিলেন। সেসময় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচিত হয় এই কর্মসূচি।

দুঃখের বিষয় হলো, এতো বছর সমাধান হয়নি ফারাক্কা বাঁধের কারণে সৃষ্ট সমস্যা। এখনও ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পানির আধার কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু স্পর্শকাতক ভূমিকা রেখেছে এই বাঁধ। ফারাক্কার পানির সুষম বণ্টন নিয়ে হয়েছে চুক্তিও।

বিজ্ঞাপন

তারপরেও এখনো, বিশেষ করে খরা মৌসুমে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় পানি সংকট। সময় যত গড়াচ্ছে এ সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠছে। পানির নায্য হিস্যার জন্য দীর্ঘ সাড়ে তিন যুগ ধরে এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ভাবে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাতেও সমাধান হয়নি কিছুই। অথচ ফারাক্কার কারণে এ অঞ্চলে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে সেই ব্যাপারে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল বহু আগে। ১৯৭৬ সালের পর থেকে প্রতি বছর দেশে ফারাক্কা দিবস পালন হয়ে আসছে। এখনো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গঙ্গার পানির নায্য হিস্যা পাবার দাবি জানাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটি বাঁধ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এর অবস্থান। ১৯৬১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। সেই বছর ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়। ফারাক্কা বাঁধ ২ হজার ২৪০ মিটার (৭ হাজার ৩৫০ ফুট) লম্বা। যেটা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় বানানো হয়েছিল। বাঁধ থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদী পর্যন্ত ফিডার খালটির দৈর্ঘ্য ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার)। ফারাক্কা বাঁধ ভারত তৈরি করে কলকাতা বন্দরকে পলি জমা থেকে রক্ষা করার জন্য। তৎকালীন বিভিন্ন সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন যে গঙ্গা/পদ্মার মত বিশাল নদীর গতি বাঁধ দিয়ে বিঘ্নিত করলে নদীর উজান এবং ভাটি উভয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে নষ্ট হতে পারে। এ ধরণের নেতিবাচক অভিমত সত্ত্বেও ভারত সরকার ফারাক্কায় গঙ্গার উপর বাঁধ নির্মাণ ও হুগলী-ভাগরথীতে সংযোগ দেয়ার জন্য ফিডার খাল খননের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে যা মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার রাজ্যে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনে। এটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার লম্বা এবং মনহরপুরে অবস্থিত।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খাঁন বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারনে রাজশাহী ক্রমশই মরুভূমিতে পরিনত হচ্ছে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি তোলা হচ্ছে। যাতে করে সরকার সেই ধরনের পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু তাও নেওয়া হয় না। ফলে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলেই রাজশাহী অঞ্চলে পানি সংকট দেখা দিচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ফারাক্কার বাঁধের কারণে এ অঞ্চলের পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি তুলনামুলকভাবে বৃষ্টিপাত কমেছে। যার কারনে পুকুর, খালবিল শুকিয়ে গেছে। সেচ কাজে ভূগর্ভস্থের পানির ব্যবহার বেড়ে যাবার কারনে পানির স্তরও ক্রমশই নেমে যাচ্ছে। আর ভারত ফারাক্কার বাঁধের মাধ্যমে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় রাজশাহী অঞ্চলে  খালবিল, নদীনালা, পুকুর, দিঘি এখন পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে।

ফারাক্কা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, শুধু ফারাক্কা নয়, উজানে গঙ্গার বহু পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে হাজার হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। পরিণতিতে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ভারত তার বহুসংখ্যক সেচ ও পানিবিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মূল গঙ্গা এবং এর উপনদীগুলোর ৯০ ভাগ পানি সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে নদীতে পানি প্রবাহিত হতে পারছে মাত্র ১০ ভাগ। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক এই নদীতে বাঁধের পর বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার ফলে মূল গঙ্গা তার উৎস হারিয়ে যেতে বসেছে। অর্ধশতাব্দীর মধ্যে গঙ্গা নদীর প্রবাহ ২০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতের নানা উচ্চাভিলাষি কর্মপরিকল্পনার শিকার হয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশ এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। শুধু ফারাক্কা নয়- গঙ্গা-পদ্মাকেন্দ্রিক বাঁধ, জলাধার, ক্রসড্যাম, রেগুলেটরসহ কমপক্ষে ৩৩টি মূল অবকাঠামো নির্মাণ করছে ভারত। এরসঙ্গে রয়েছে আনুষঙ্গিক আরো অসংখ্য ছোট-বড় কাঠামো। ফলে বাংলাদেশের হাজারো চিৎকার আর আহাজারি সত্ত্বেও ফারাক্কা পয়েন্টে পানি না থাকার ফলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা তো দূরে থাক সাধারণ চাহিদাটুকুও পূরণ করতে পারছে না।

১৯৭৬ সালের এই দিনে লংমার্চ শুরুর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে মাদরাসা ময়দানের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন  মাওলানা ভাসানি। জনসমুদ্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আপোষে ফারাক্কা সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। ভারত যদি আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রস্তাবে সাড়া না দেয় বিশ্বের শান্তিকামী জনগনও ভারতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করবে।’

বক্তৃতা শেষে মাওলানা ভাসানির নেতৃত্বে শুরু হয় লং মার্চ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে শেষ হয় মিছিল। সেসময় তার সহচর হিসেবে ছিলেন মরহুম মশিউর রহমান যাদু মিয়া, কাজী জাফর আহমদের মতো নেতারা।

সারাবাংলা/এসএমএন

ফারাক্কা দিবস ফারাক্কা বাঁধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর