শিক্ষকের ওপর হামলার ‘নির্দেশদাতা’ ছাত্রলীগ নেতার নাম নেই মামলায়
১৬ মে ২০১৯ ২০:৩৪
ঢাকা: পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের শিক্ষক মাসুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বুলবুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন জুন্নুনকে মামলার এজাহার থেকে বাদ দিয়েছেন বাদী কলেজের অধ্যক্ষ এস এম আব্দুল কুদ্দুস। যদিও হামলার শিকার শিক্ষকের দাবি, ছাত্রলীগ নেতা জুন্নুনের নির্দেশে তার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার সময় ছাত্রলীগের এ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিতও ছিলেন।
শহীদ বুলবুল কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মাসুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় পাবনা সদর থানায় একটি মামলা হয়। বুধবার (১৫ মে) রাতে কলেজ অধ্যক্ষ এস এম আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়।
থানার ওসি ওবায়দুল হক জানিয়েছেন, মামলার পর রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত দুই আসামি সজল ইসলাম ও শাফিন শেখকে করা হয়েছে।
গত ১২ মে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন শিক্ষক মাসুদুর রহমান। শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ওই শিক্ষক মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘৬ মে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরীক্ষা চলাকালে দুই ছাত্রী একে অপরের খাতা দেখার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। বারবার মানা করার পরও দুই ছাত্রী কথা না শোনায় তিনি দুইজনের খাতা কিছুক্ষণের জন্য আটকে রাখেন। এ ঘটনায় দুই ছাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতিতে জানায়। এর জের ধরে ১২ মে কলেজ ফটকে তার ওপর হামলা চালানো হয়।’
শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ সভাপতি জুন্নুন এ হামলার নির্দেশ দেন। পরীক্ষার হলে যাদের খাতা কিছু সময়ের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল ওই দুই শিক্ষার্থী জুন্নুনের পরিচিত। তাদের ইন্ধনেই আমার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার সময় জুন্নুন বলেছিলেন, ‘ধর শালারে, ধর।’
ওই শিক্ষক দাবি করেন— শুধু শহীদ বুলবুল কলেজের ছাত্র নয়, হামলার সময় পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকেও ছাত্রলীগের কর্মীরা এসেছিল।
কলেজটির বাংলা বিভাগের শিক্ষকের ওই শিক্ষকের অভিযোগ, বিভিন্ন মহলের চাপে ছাত্রলীগ সভাপতির নাম মামলার এজাহার থেকে বাদ দিয়েছেন অধ্যক্ষ।
আপনি নিজে বাদী হয়ে মামলা করেননি কেন জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রিন্সিপাল যেভাবে মামলাটি করেছেন তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আমরা ভিন্ন কোনো চিন্তা করছি।’
ওইদিনের হামলার ঘটনাটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সেই হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, মাসুদুর রহমান মোটরবাইকে করে কলেজ থেকে বের হওয়ার পথে কলেজের প্রধান ফটকে তাকে থামানো হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন তরুণ শিক্ষক মাসুদকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর পেছন থেকে মাসুদকে একজন সজোরে লাথি মারেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলার সময় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন জুন্নুনও উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন জুন্নুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিওতে আমাকে দেখেছেন। ঘটনার সময় আমি ওখানে ছিলাম সত্য, তবে হামলার আমার কোনো দায় নেই। ওই সময় আমি প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যাচ্ছিলাম, দেখি শিক্ষককে মারা হচ্ছে। আমি কাছে গিয়ে শিক্ষককে রক্ষা করি এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ওখান থেকে সরিয়ে দিই।’
‘ওই শিক্ষকের অভিযোগ আপনি হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন’ জানালে জুন্নুন বলেন, ‘এটি ঠিক নয়। ছাত্রলীগের কেউ হামলায় জড়িত নয়। ওই স্যার কেন আমাকে দোষী করছেন বুঝতে পারছি না।’
‘ছাত্রলীগ জড়িত না থাকলে কলেজ শাখা কমিটি স্থগিত কেন করা হলো’ জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘একটা অভিযোগ এসেছে। তাই কলেজ শাখা কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। তদন্ত করলে বোঝা যাবে, আমাদের কেউই জড়িত নন। এছাড়া মামলা হওয়ার পর তো দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা ছাত্রলীগের কেউ না।’
‘আপনি নির্দোষ হলে হামলার শিকার শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানো আপনার দায়িত্ব ছিল, সেটাও করেননি। এছাড়া শিক্ষকের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করেননি’ সারাবাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে বুলবুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘আমি ওই স্যারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কলেজে গিয়ে পাইনি। তাছাড়া অবস্থা ঘোলাটে ছিল। স্যারের সঙ্গে ভালো মনে দেখা করতে গেলাম, হয়ত হিতে বিপরীত হয়ে গেল। এই কারণে আমি স্যারের সামনে যাইনি।’
মামলায় ছাত্রলীগ নেতা জুন্নুনের নাম না রাখা প্রসঙ্গে শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ এস এম আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘দুইজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আর হামলার সময় আমি যেহেতু ঘটনাস্থলে ছিলাম না তাই ছাত্রলীগ সভাপতিকে আসামি করা হয়নি। আমি তো দেখিনি। তিনটি ভিডিও ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’
‘আপনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না তাহলে মামলা করলেন কীভাবে’ জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওই শিক্ষক মামলা করতে চাননি। তাই আমি মামলা করেছি। কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আমাকে এ মামলা করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করেই মামলা করা হয়েছে।’
তবে হামলার শিকার শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেছেন, ‘অধ্যক্ষ স্যারের দাবি ঠিক নই। যারা হামলা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
সারাবাংলা/একে