মেঘনায় ধরা পড়ছে না ইলিশ, দুশ্চিন্তায় জেলেরা
১৭ মে ২০১৯ ০৮:৪০
লক্ষ্মীপুর: দুই মাস পর মেঘনায় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠেছে। স্বভাবতই লক্ষ্মীপুরের মেঘনা পাড়ের জেলেরা প্রবল উৎসাহ আর আশা নিয়ে নদীতে জাল ফেলেছিলেন। কিন্তু তাদের হতাশ হতে হয়েছে। কেননা দিন-রাত জাল ফেলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষি পরিমাণের ইলিশ। ফলে শঙ্কায় কাটছে জেলেদের দিন।
তবে জেলার মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইলিশ ভ্রমণশীল মাছ, এসময় ইলিশের জাটকাগুলো সাগরে যায়, আবার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বড় হয়ে নদীতে ফিরে আসে।
নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ১ মে থেকে মেঘনায় মাছ ধরা শুরু হয়। একদিন পেরোতেই আসে ঘূর্ণিঝড় ফণীর পূর্বাভাস। ফলে সেসময় কয়েকদিন নদীতে নামতে পারেননি জেলেরা। তবে যখন নামলেন, তখন আর জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ।
মেঘনা পাড়ের জেলেরা জানালেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে এমনিতেই কিছুদিন তাদের অভাব-অনটনে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে চাল দেওয়া হয় সেটাও সবাই পান না। এর মধ্যে যখন মাছ ধরা শুরু করলেন তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ না পাওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
জেলে ও স্থানীয়রা জানান, গত ১ মে থেকে জেলেরা জাল ও নৌকা মেরামত করে মাছধরার প্রস্তুতি নিয়ে মেঘনা নদীতে নেমেছিলেন। একদিন যেতে না যেতেই ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে তিন-চার দিন নদীতে নামতে পারেননি। এরপর নদীতে নেমে বেশরিভাগই খালি হাতে ফিরেছেন।
জেলেরা জানান, মাছ ধরতে বের হলে নৌকার তেল ছাড়াও দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। ফলে মাছ না পাওয়ায় রীতিমতো লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে, এই মাছের ওপর নির্ভর করেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় গড়ে উঠেছে ১৫ থেকে ২০টি আড়ত। এসব আড়ত ঘিরে আবার গড়ে উঠেছে মাছ সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান বরফ তৈরির ৪০টি ফ্যাক্টরি। এসব স্থানে কর্মসংস্থান হয়েছে হয়েছে বহু মানুষের। যে ইলিশকে ঘিরে এতো আয়োজন, সেই ইলিশই যদি না মেলে তাহলে বেকার বসে থাকতে হয় সবাইকেই।
কথা হয় হয় কমলনগর উপজেলার জেলে আলমগীর মাঝির সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে যে মাছ শিকার করছেন, তা দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেলের খরচও উঠছে না। নদীতে ইলিশ মাছ নেই বললেই চলে। আগের স্মৃতিচারণ করে এই জেলে বলেন, ‘এখন সারাদিনে আধা ডালা মাছ মিলে না। আগে নদীর পাড় দিয়ে পুঁটিমাছ গড়াইয়া যাইত। সার-কীটনাশক মাছ শেষ কইরা ফালাইছে।’
নদীর পাড়ে চর জগবন্ধু এলাকার জেলে জয়দল (৫০) জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি নদীতে জাল ফেলেছেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে বাড়ি ফিরেছেন খালি ডালা নিয়ে। ফলে ধার আর দাদনের দেনা শোধের দুশ্চিন্তায় আছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে জীবন চালাবেন, তা ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না।
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন জেলে আবুল বাশারও। তিনি জানান, গোটা রাত-দিন মিলে মাত্র আটটি ইলিশ ধরতে পেরেছিলেন। ফলে নৌকার খরচ তো উঠছেই না, উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রামগতি মাছ ঘাটের ব্যবসায়ী মিনাজ মাঝি বলেন, গত বছর এ সময়ে ঘাট থকে প্রায় ২০০ টন ইলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে যেত। কিন্তু এ বছর সেই একই সময়ে মেঘনায় মাছই নেই। গত বছরের কথা এখন গল্পের মতো শোনাচ্ছে।
কমলনগরের মতিরহাট মাছ ঘাটে গিয়ে যায়, সারাদিনে যেটুকু মাছ আসে তা দিনের প্রথমভাগেই শেষ হয়ে যায়। ঘাটের ব্যবসায়ী মনছুর জানান, এক কেজির ওপরে মাছের মণ ৬৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ইলিশ কম ধরাপড়ায় ইলিশের দাম কিছুটা বাড়তি। তা না হলে বাজারে ইলিশের দাম আরও কম হতো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিবউল্লাহ বলেন, ইলিশ ভ্রমণশীল মাছ। এসময় ইলিশের জাটকাগুলো সাগরে যায়, আবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বড় ইলিশ হয়ে ফিরে আসে। সে কারণে ইলিশ জালে ধরা না পড়লে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই জেলেদের জালই বড় ইলিশে ভরে উঠতে পারে বলে আশার কথা শোনালেন তিনি। পাশাপাশি এই সময়ে নদীতে অন্য যেসব মাছ পাওয়া যায়, সেগুলো ধরেই আপাতত জীবিকা নির্বাহ করার পরামর্শ এই মৎস্য কর্মকর্তার।
সারাবাংলা/এসএমএন