ঋণখেলাপিদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
১৭ মে ২০১৯ ১২:২৭
ঢাকা: ঋণখেলাপিদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সুবিধার ফলে ঋণখেলাপিরা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল (নিয়মিত) করতে পারবেন। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে এক বছর বাড়তি সুবিধাসহ সর্বোচ্চ ১০ বছরে ঋণের টাকা পরিশোধ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাস কোনো কিস্তি দিতে হবে না।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন পরিশোধ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এ সংক্রান্ত নীতিমালার একটি খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। পরে এই নীতিমালার খসড়া কিছুটা যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রজ্ঞাপন জারি করে। দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহীদের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঋণ বিরূপভাবে খেলাপি হয়ে যাওয়ায় ঋণ বিতরণ ও আদায়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদনশীল খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখতে এবং ঋণ আদায়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছে তারা এই সুবিধা পাবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মন্দ বা ক্ষতিজনক, অর্থাৎ শ্রেণিকৃত রয়েছে এমন ঋণগ্রহীতার ব্যাংকার ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা পাবেন। তবে সার্কুলারের ৯০ দিনের মধ্যে ঋণগ্রহীতাকে এই সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। এই সময় পার হলে সুবিধা পাওয়া যাবে না। আর আবেদনের ৪৫ দিনের মধ্যে ব্যাংককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, একই সময় গ্রাহকরা নতুন ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। সুদহার হবে ঋণ স্থিতির তহবিল খরচের ওপর ৩ শতাংশ, তবে, ৯ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে। পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ঋণের বিপরীতে যে মামলা রয়েছে তা স্থগিতের জন্য ব্যাংক ও গ্রাহককে উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি, জাহাজ ও ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা এই সুবিধা পাবেন। আবার বিশেষায়িত কৃষি বহির্ভূত খাতে আমদানি-রফতানিতে যুক্তরাও এই সুবিধা পাবেন। এছাড়াও, অন্যান্য খাতে জড়িত প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যদি নিজের কারণে ক্ষতিতে না পড়েন এবং তা ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত হয় তারাও এই সুবিধা পাবেন।
এছাড়াও, আরেকটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যারা ভালো ঋণগ্রহীতা এবং কখনো ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হননি, তাদের সুদ ফেরত দিতে হবে। এক বছরে তাদের থেকে যে সুদ আদায় হয়েছে তার ১০ শতাংশ ব্যাংক থেকে ফেরত দিতে হবে।
ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ
২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এর বাইরেও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হিসাব থেকে বাদ দিতে অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। এগুলোও খেলাপি ঋণ। এ ছাড়া গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এদিকে, মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ৪৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। সরকারি বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ৩৮ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, বিদেশি ব্যাংকগুলো খেলাপি ২ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাতে সরকারের দেওয়া সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সুবিধা
চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাতের করপোরেট কর সাড়ে ৪২ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানো হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে টানা ৯ বছর এক পরিবারের ৪ জনকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানত রাখার সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। এসবের বিনিময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত ও সুদের হার নয়/ছয় করার কথা থাকলেও বাস্তবে আমানত নিচ্ছে ১০ শতাংশের বেশি এবং ঋণের সুদ ১৫/১৬ শতাংশ। এছাড়াও, ২০১৫ সালে বিশেষ বিবেচনায় ডাউন পেমেন্ট ও মেয়াদের শর্ত শিথিল করে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন, এমন ১১টি ব্যবসায়ী গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সময় তারা ১৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকা ঋণ পুনঃগঠন করে। এই সুবিধা পাওয়ার পরেও পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠিত ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়ায় সুদে-আসলে ব্যাংকগুলোর পাওনার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম