Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকার বৌদ্ধ মন্দির


১৭ মে ২০১৯ ১৮:০৯

ঢাকা: মঙ্গলবার (১৪ মে) সকাল ১১টা। রাজধানীর সবুজবাগ বৌদ্ধ মন্দির। মূল গেট বন্ধ, যাতায়াতের জন্য খোলা ছোট একটি গেট। নিরাপত্তাকর্মী একরামুল হক সেই গেট পাহারার দায়িত্বে। ঢুকতে চাইলে বাধা দিয়ে পরিচয় জানতে চান। পরিচয় দিলে ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে ডাক দেন, তার সঙ্গে যেতে হয় ভেতরে।

মন্দিরের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে পাহারা দিচ্ছিল সবুজবাগ থানা পুলিশের কয়েকটি দল। কয়েকজন আনসার সদস্যও ছিলেন সেখানে, সাদা পোশাকে ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কয়েকজন সদস্যও।

বিজ্ঞাপন

দায়িত্বে থাকা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান মেজবাহ জানালেন, মন্দিরটি ঘিরে পুলিশের ২০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। রয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরাও। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতি মনিটরিং করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দিনে কয়েকবার করে মন্দির পরিদর্শন করে যাচ্ছেন।

কেবল সবুজবাগ নয়, রাজধানীর অন্য বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতেও দেখা গেছে এমন বাড়তি নিরাপত্তার চিত্র। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে— বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বুদ্ধ-পূর্ণিমা

সবুজবাগ বৌদ্ধ মন্দিরের প্রবেশপথে দায়িত্ব পালন করা একরামুল হক সরাবাংলাকে বলেন, ‘এই মন্দিরে গত ৫ বছর ধরে চাকরি করছি। এত নিরাপত্তা আগে কখনো দেখিনি।’ কেন এত নিরাপত্তা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনছি, জঙ্গিরা নাকি হুমকি দিছে। তারা নাকি হামলা করবে। এজন্য পুলিশ ও র‌্যাব এত নিরাপত্তা দিছে। আমাকে বলছে, কাউরে যেন ঢুকতে না দেই।’

বিজ্ঞাপন

দুপুর ১টার দিকে মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধ মন্দিরের গেটে কথা হয় এসআই ফেরদৌস হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই মন্দিরে উৎসব ছাড়া তেমন একটা মানুষের ভিড় হয় না। তবু নিরাপত্তা হুমকি থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। কোথাও কোনো ফাঁক রাখা হচ্ছে না। ভেতরে ও বাইরে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছেন।

গত শনিবার (১১ মে) একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়, আগামী ১৮ মে অনুষ্ঠেয় বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এমন তথ্য পেয়ে রোববার (১২ মে) রাতেই সারাদেশের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দফতর। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিশেষ করে রাজধানীর সবুজবাগ, মেরুল বাড্ডা ও নর্দ্দা এবং মিরপুর-১৩ ও উত্তরা-১৬ নম্বর সেক্টরের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

বুদ্ধ-পূর্ণিমা

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা সারাবাংলাকে জানান, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা যেন স্বাভাবিক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আয়োজনে ঘাটতি না থাকে, সেজন্য পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক হয়েছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক ওই সভায় আইজিপি বলেন, বুদ্ধপূর্ণিমার নিরাপত্তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো শঙ্কা নেই। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করে বৌদ্ধ মন্দিরকেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই উৎসব ঘিরে যেন কোনো গোষ্ঠী বা মহল কোনো ধরনের গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেজন্যও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা পুলিশের সব ইউনিটকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুদ্ধপূর্ণিমা সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও ব্লক রেইডের ব্যবস্থা নিতেও পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি।

এর বাইরেও কমিউনিটি পুলিশের সদস্য, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের সহায়তা নিয়ে মন্দিরগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মন্দিরগুলোতে ব্যাগ, পার্স, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি সঙ্গে না আনার জন্যও পূণ্যার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিবছরের মতো এ বছরও দেশের প্রায় আড়াই হাজার বৌদ্ধ মন্দিরে শান্তিপূর্ণভাবে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হবে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে আশাবাদ জানান আইজিপি।

সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, এটিইউয়ের অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আবুল কাশেম, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপার, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের মহাসচিব পি আর বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি অশোক বড়ুয়া, বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টির সদস্য বাসন্তী চাকমাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

জঙ্গি হামলার আশঙ্কা বুদ্ধ পূর্ণিমা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর