ঈদ বাজার: ভিড় জমেছে শপিংমল থেকে ফুটপাতে
১৮ মে ২০১৯ ১০:৫৩
ঢাকা: একটা সময় ঈদের কেনাকাটার ধুম পড়ে যেত ঈদের সাতদিন আগে থেকে। কিন্তু দিন বদলেছে, রোজার প্রথম থেকেই এখন দরজিবাড়িতে শুরু হয় ব্যস্ততা। শপিং মল বা নিউমার্কেটে মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে। সেই হিসাবে রোজার ১২ দিনের মাথায় সরকারি ছুটিতে সবাই ছুটেছেন কেনাকাটা সেরে নিতে। একইভাবে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না ফুটপাতের দোকানিরাও।
সব ধরণের ক্রেতার জন্য সবচেয়ে বড় বাজার নিউমার্কেট। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত ক্রেতারা ঘুরে দেখছেন এ বাজারের বিভিন্ন পণ্যের দোকান। সবচেয়ে বেশি ভিড় হচ্ছে কাপড়ের দোকানে। কাপড়ের মধ্যে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে শাড়ি ও থ্রি পিস। এরপরেই গয়না ও প্রসাধনী কিনতে ছুটছেন মানুষ।
নিউ শাড়ি বিতানের বিক্রয় কর্মকর্তা বিকাশ কর্মকার বলেন, গতবারের চেয়ে এবার শাড়ির দাম খুব বেশী বাড়েনি তবে বিক্রি বেড়েছে। আগে আগেই কেনাকাটা শুরু করে দেওয়ায় দশ রমজান থেকেই ঈদের আমেজ পাচ্ছে দোকানিরা।
আগে আগেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করার কারণ বললেন এই দোকান থেকে শাড়ি কেনা জেবুন্নাহার। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, রোজার শেষ দিকে খুব ভিড় হয়, ভিড়ের মধ্যে অনেক খারাপ মানুষ আছে যারা গায়ে হাত দেয়। এছাড়া এ বছর গরমও পড়েছে অনেক বেশি, এজন্য আগে আগে ঈদের কেনাকাটা সেরে রাখছি।
নিউ মার্কেটের পাশে চাঁদনি চক, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, চন্দ্রিমা এবং উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের ইস্টার্ন প্লাজায় একই রকম ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। ইস্টার্ন প্লাজায় প্রযুক্তিপণ্যের কদর বেশি হলেও অন্য মার্কেটগুলোতে বেশিরভাগ ক্রেতারা এসেছেন কাপড় কিনতে। রাজধানীর যেকোনো মার্কেটের তুলনায় এসব মার্কেটে পণ্যমূল্য অনেক কম বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
তবে বসুন্ধরার মতো অভিজাত শপিং মলে পণ্যমূল্য নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অনেক ক্রেতা। ধানমন্ডি থেকে কেনাকাটা করতে আসা রহিমা আফরোজ বলেন, বসুন্ধরায় সারা বছর যে দামে কেনাবেচা হয়, ঈদ আসলে সেটা এক লাফে আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। হ্যাঁ, এটা সত্য এখানে উচ্চবিত্ত ক্রেতারা পণ্য কিনতে আসেন, কিন্তু তাই বলে আপনি তাদের পকেটে কাটতে পারেন না। আমার মনে হয় ঈদের সময় এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। নইলে ক্রেতারা বিদেশমুখী হতে বাধ্য হবে।
চল্লিশোর্ধ এই গৃহিণী দাম নিয়ে নাখোশ হলেও বছর পঁচিশের তরুণী ইমানা হক তানজি মনে করেন বসুন্ধরার পণ্যমূল্য এখনও হাতের নাগালেই রয়েছে। তানজির যুক্তি, আপনি যখন বসুন্ধরায় কেনাকাটা করতে আসবেন তখন টাকা খরচ করার মানসিকতা নিয়ে আসবেন। সুতরাং এখানে কিনতে এসে দাম নিয়ে ভাবাটা উচিৎ না।
বসুন্ধরার বেশ কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেকোনো পণ্যের যৌক্তিক দামই ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করছেন তারা। কারো কাছে হয়তো এটি বেশি মনে হচ্ছে, আবার কারো কাছে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক।
এসব শপিংমল ছাড়াও ফুটপাতে এবারের ঈদের বাজার বেশ রমরমা। জুতা থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস, পারফিউম, কী নেই এখানে! দামও ঢাকার যেকোনো বাজারের তুলনায় অনেক কম। ফলে স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের জন্য এসব অস্থায়ী মার্কেট সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য।
বলাকা সিনেমা হলের ফুটপাথে শিশু ও মেয়েদের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকার আতাউর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের এখানে দোকান ভাড়া দিতে হয় না, এসি’র ভাড়া দিতে হয় না, তাই আমরা অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারি। সারা বছরই আমাদের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। ঈদ উপলক্ষে এখন সেই ভিড় বাড়ছে। ভিড় দেখে মনে হচ্ছে এ বছর রেকর্ড পরিমাণে বিক্রি হবে।
ফুটপাথের এসব দোকানি ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, জিনস প্যান্ট ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, টি-শার্ট ২৫০ থেকে ৪০০, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ থেকে ১২০০, শাড়ি ৪৫০ থেকে ১০০০, শিশুদের থ্রি-কোয়ার্টার জিনস প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০, শাড়ি ৫০০ থেকে ১৫০০ এবং ছেলে ও মেয়ে শিশুদের কাপড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
ফুটপাতের দোকানিদের দাবি, এ পণ্যগুলোই বড় মার্কেটে এবং অভিজাত শপিং মলগুলোতে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমাসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটের দোকানিরা বলছেন, ফুটপাতের পণ্যের তুলনায় তাদের পণ্য মানের দিক থেকে বেশ উৎকৃষ্ট।
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে অনলাইন মার্কেটেও শুরু হয়েছে কেনাকাটার উৎসব। দারাজ, এখানেই, আলী এক্সপ্রেস ও আমাজনের মতো বড় ই-কমার্স এর পাশাপাশি ফেসবুক ভিত্তিক ছোট ই-শপগুলোও ভাল ব্যবসা করছে এবার। তাছাড়া পণ্য বৈচিত্র্যতার কারণেও এসব অনলাইন থেকে কিনতে ছুটছে ক্রেতারা।
সারাবাংলা/টিএস/জেএএম