Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট ২০১৯-২০-এ করের বোঝা বাড়বে না


১৮ মে ২০১৯ ২০:১৫

ঢাকা: আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে কর আদায় ব্যবস্থা সহজ করা ও করের আওতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে করের হার (ট্যাক্স) না বাড়িয়ে কর দাতার সংখ্যা (ট্যাক্স পেয়ার) বাড়ানোর জন্য বিশেষ দিক নির্দেশনা থাকছে। অর্থাৎ নিয়মিত করদাতাদের উপর বোঝা না বাড়িয়ে নতুন নতুন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সারাবাংলাকে বলেন, আগামী বাজেটে করযোগ্য সবাইকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। করের হার কমিয়ে আওতা বাড়ানো হবে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ কর দেয়, এই অভিযোগ আর থাকবে না।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা কর আহরণ করা হবে। এদেশে মুষ্টিমেয় যারা কর দেন তাদের দুর্ভাগ্য। কিন্তু আরো অনেক মানুষ আছেন যারা কর দেয়ার যোগ্য কিন্তু দিচ্ছেন না, তাদের করের আওতায় আনা হবে। এবার বাজেটে ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাস্টমসেও সংস্কার আনা হবে বলেও তিনি জানান।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এবারের বাজেট হবে সবচেয়ে বড় বাজেট। বাজেটের খরচের ৬৫ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করা হবে। এটা উচ্চাবিলাসী বলা হলেও আমরা চেষ্টা করছি বাস্তবায়ন করতে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছর অবশ্যই ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ফলে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, বাজেটের আওতা বাড়ানো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা প্রস্তুত। করের আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে, দেশীয় শিল্পের সহযোগীতার জন্য বর্তমানে যে সুযোগ সুবিধা চালু আছে তা অব্যাহত রাখা হবে।

পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশে ট্যাক্স জিডিপির রেশিও‘র তুলনায় একটু বাড়েনি। অথচ একই সময়ে ভারতে ট্যাক্স জিডিপির রেশিও বেড়েছে ৪০ শতাংশ। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা ভ্যাট ট্যাক্স আহরণে পিছিয়ে পড়েছি। তাই  এই ক্ষেত্রে করের আওতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ নজর দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৩৬ লাখের কাছাকাছি। এটি মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে দেশে আয়কর দেওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা রয়েছে ১ কোটির বেশি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হলে নিয়মিত করদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ কমবে। অন্যদিকে, আয়কর দেওয়ার যোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনতে না পারলে পুরনো করদাতারা কর দেওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং তারা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে। আবার নতুন যারা কর দেয়ার সামর্থ অর্জন করেছেন তারাও ভয়ে এর আওতায় আসতে চাইবেন না। ফলে, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে কর আদায় ব্যবস্থা সহজীকরণ ও আওতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

করপোরেট কর : চলতি অর্থবছরে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকা বহির্ভূত করপোরেট কর আড়াই থেকে ৫ শতাংশ কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। তবে, আগামী বাজেটে করপোরেট কর অপরিবর্তিত থাকছে বলেই জানা গেছে।

ব্যক্তিশ্রেনীর আয়কর সীমা : বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণীর আয়কর সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ কোনো ব্যক্তি বছরে এই পরিমাণ অর্থ আয় করলে তাকে আয়কর দিতে হয় না। গত চার বছর ধরে ব্যক্তি আয়কর সীমা একই আছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এটাকে তিন লাখ টাকা উন্নীত করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যমান কর ব্যবস্থায় নারী করদাতারা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিদের করমুক্ত আয় সীমা ৩ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়কর সীমা চার লাখ টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়কর সীমা চার লাখ ২৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে করমুক্ত আয়কর সীমা উল্লেখিত তিনটি ধাপ বাড়িয়ে যথাক্রমে সাড়ে তিন লাখ, চার লাখ এবং পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। তবে, এবার ব্যক্তি আয়কর সীমা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হবে। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। এটি বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। একই সঙ্গে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসাবে আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

২০১৯-২০২০ অর্থমন্ত্রী বাজেট সংসদ ভবন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর