ময়মনসিংহে এখনো বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের পণ্য
১৮ মে ২০১৯ ২১:১৬
ময়মনসিংহ: বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগ। সেই সঙ্গে এসব খাদ্য পণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
তবে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারের বিভিন্ন দোকানে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। শুক্রবার (১৭ মে) রাত ৮ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
কাশেম ফুডের সান চিপসকে নিম্নমানের পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে বাজার থেকে তুলে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
তবে এ ক্ষেত্রে কৌশল পাল্টেছে বেকারিটি। শো রুমের পেছনের সুরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়েছে এসব পণ্য। সেখান থেকেই গোপনে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো।
এ শো রুমের কথিত গুদামে প্রবেশ করতেই ম্যানেজার কামরুল ইসলাম দাবি করলেন, ‘রিজেক্ট মালগুলো সব এখানে রাখা হয়েছে।’
এরপর সান চিপসের সঙ্গে পটেটো ক্র্যাকার্স ঝুলিয়ে রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘এগুলো এখনই সরিয়ে ফেলছি।’ মূলত এ শো-রুমটির বেশিরভাগ খাবার পণ্যই রাখা হয়েছে তাদের দাবি করা ‘গুদামে’।
এ চিত্র যে কেবল শুধু এ বেকারিটির, বিষয়টি তেমন নয়। নগরীর নতুন বাজারের খুচরা ও পাইকারি বেশ কয়েকটি দোকানেও মিলেছে অভিন্ন চিত্র। সেখানেও হাত বাড়ালেই মিলছে রূপচাঁদা সরিষা তেল, এসিআই লবণ, ডুডলি নুডলস ও তীর সরিষার তেল। যেগুলো নিম্নমানের বলে বাজার থেকে তুলে নিতে বলা হয়েছে।
তবে এসব পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও রীতিমতো দক্ষ এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। নিষিদ্ধ হওয়ার পর কম দামে বিক্রি করছে এসব পণ্য। পরিচয় গোপন করে এসব দোকানে গিয়ে এমন অভিনব চিত্র ধরা পড়ে। তবে সংবাদকর্মী পরিচয় পেতেই এসব পণ্য বাতিলের তালিকায় রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ী নারায়ণ বসাক ও বাবুল বসাক।
তারা দাবি করেন, এসব পণ্য কোম্পানির জন্য আলাদা করে রাখা হয়েছে। আবার কিছু কিছু পণ্য ইতোমধ্যেই কোম্পানির লোকজন এসে নিয়ে গেছেন।
তারা লোকমুখে শুনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব মানহীন ভেজাল পণ্য নিয়ে যেতে বলেছেন। এমনকি এ বাজারে এখন পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোনো টিমের তৎপরতাও দেখা যায়নি। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে একদিন প্রতিদিন প্রতারণা করে যাচ্ছেন অসাধু এসব ব্যবসায়ীরা।
ভেজাল পণ্য বিক্রির অভিন্ন এ চিত্র নগরীর নামিদামী বিভিন্ন কনফেকশনারির দোকানেরও। সেখানে এসব পণ্যের তালিকা পাওয়া যায়নি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি সারোয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদালত মানহীন পণ্য হিসেবে যেসব পণ্যের তালিকা দিয়েছে সেই তথ্য সাধারণ মানুষ জানে না।’
এ সম্পর্কে কোনো প্রচারও নেই। সচেতন কেউ জানতে চাইলে দোকানি কৌশল করে উত্তর দিচ্ছেন এসব পণ্য আমাদের কাছে নেই। আগে ছিলো নিষেধাজ্ঞার পর আর বিক্রি হচ্ছে না।’
তবে নগরীর রয়েল বেকারির কর্মচারী শ্যামল চন্দ্র দে বেশ সচেতন মনে হলো। তার দোকানে ক্রেতা সেজে ৫২টি পণ্যের কয়েকটি নাম বলতেই তিনি বললেন, ‘এগুলো নিষিদ্ধ পণ্য। পরশু মোবাইল কোর্ট এসেছিলো।তারা এসব পণ্য সরিয়ে নিতে বলেছে। এরপর এসব পণ্য আমরা আর বিক্রি করছি না।’
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/এমএইচ