মুক্তিযোদ্ধার বয়স নির্ধারণে সংশোধিত পরিপত্র বেআইনি
১৯ মে ২০১৯ ১৩:৩৬
ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে জারি করা সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের আটকে যাওয়া বকেয়া ভাতা আগামী ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
রোববার (১৯ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স সংক্রান্ত সংশোধিত পরিপত্র জারি করে।
বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের পরিচালক মাহমুদ হাসানের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৫ জুলাই বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেছিলেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওমর সাদাত। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন, কোনো রকম কারণ দর্শানের নোটিশ ছাড়াই তাদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ বছর ৬ মাস হয়নি তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে না।
ওমর সাদাত আরও বলেন, আমরা সমস্ত আইনকানুন কোর্টের সামনে পেশ করি, কোর্ট সমস্ত দেখে রায় দিয়েছেন। সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণেও দেখবেন তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছিলেন। সেখানে বয়সের কোনো বিধান ছিল না। আমাদের যিনি বীর প্রতীক ছিলেন শহীদুল ইসলাম লালু, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১০ বছর। বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন এবং বীর প্রতীক খেতাব দিয়েছিলেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে বীর প্রতীক তো ননই, তিনি আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও বিবেচিত হবেন না।
তিনি জানান, মাননীয় বিচারক অত্যন্ত উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং এক পর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, যেটার ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশ গঠন হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে দেশ হিসেবে আমরা সামনে আগাতে পারবো না। আদালত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স সংক্রান্ত সকল গেজেট বাতিল করেছেন এবং বকেয়াসহ তাদের সমস্ত পাওনা ফেরত দিতে বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মোট ১৬ জনের পক্ষে রিট পিটিশন দাখিল করি। সকলের পক্ষেই রায় এসেছে। কোর্ট এখানে বলেছেন শুধু বাংলাদেশে না, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। মুক্তিযুদ্ধ মানুষ আবেগ দিয়ে করে, দেশ প্রেম থেকে করে। আদালত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উদাহারণ টেনে বলেছেন, ৭-৮ বছর বয়সী যোদ্ধা সে সময় ছিল। বাংলাদেশে বই আছে শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করা হবে না কি না সেটি রায় দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সংবাদ
‘মুক্তিযোদ্ধার বয়স নির্ধারণে সংশোধিত পরিপত্র কেন বেআইনি নয়’
সারাবাংলা/এজেডকে/এটি