রূপপুর গ্রিনসিটির অনিয়ম নিয়ে গণপুর্তের তদন্ত কমিটি
২০ মে ২০১৯ ০১:০৯
ঢাকা : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পের ১১০ ফ্ল্যাটের জন্য অস্বাভাবিক মূল্যে আসবাবপত্র কেনা ও ভবনে উঠানোর ঘটনায় সংগঠিত আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় হতে একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর হতে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই দুই কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারের সকল বিল প্রদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটি আজ রবিবার (১৯ মে) থেকে কাজ শুরু করেছে বলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
এদিকে, রবিবার রূপপুর প্রকল্পের অনিয়ম বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন করে ৬টি প্যাকেজে ই-জিপিতে দরপত্র আহবান করা হয়। প্যাকেজসমূহের প্রতিটির ক্রয়মুল্য ৩০ কোটি টাকার নিচে প্রাক্কলন করায় গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় হতে একজন
অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর হতে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার পেমেন্ট বন্ধ রাখার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় হতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আলোচ্য কাজের বিপরীতে এখনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।’
দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পে ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে।
বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নজরে এলেই নির্দেশ দেয়া হয় তদস্তের। গ্রিনসিটির বিভিন্ন ফ্ল্যাটে রাশিয়ান নাগরিকদের থাকার জন্য কেনাকাটার ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিটি বালিশ কিনতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর সেই বালিশ ফ্ল্যাটে উঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩৮ টাকা থেকে শুরু করে ৭৬০ টাকা। একেকটি ইলেকট্রিক কেটলি ৫ হাজার ৩১৩ টাকায় কেনা হয়। ওই কেটলি ভবনে উঠানোর খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা।
একইভাবে প্রতিটি আয়রন কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ১৫৪ টাকা। আর তা ভবনে উঠানোর খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা। ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা করে কেনা প্রতিটি রেফ্রিজারেটর উপরে উঠাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি ওয়াশিং মেশিন কেনা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায়। ফ্ল্যাটে উঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩০ হাজার ৪১৯ টাকা করে। এভাবে ফ্ল্যাট সাজাতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনা ও ভবনে তোলার কাজে বেশুমার খরচ দেখানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর সারাবাংলা’কে বলেন, সরকারের মেগা এ প্রকল্পে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় কাজ করছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব খরচে নিজ নিজ উদ্যোগে কাজ করছে। গ্রিনসিটি প্রকল্পের সব কাজ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব। ওখানে কোনো
ধরনের অনিয়ম হলে ওই মন্ত্রণালয় দায়ী হবে।
তিনি বলেন, তারপরও এ ‘অস্বাভাবিক’ খরচের বিষয়টি নিয়ে তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ এ প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উন্নয়নে সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর প্রতিটি কাজ সরকারের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছে। এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
সারাবাংলা/এইচএ/টিএস
অনিয়ম গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকার