ফুটপাতে হকার বসার অনুমতি নিয়ে ধোঁয়াশা
২১ মে ২০১৯ ০৭:৫৫
ঢাকা: চার মাস বন্ধ থাকার পর আবারও রাজধানীর ফুটপাতে বসতে শুরু করেছে হকাররা। তবে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে তাদের অনুমতি নিয়ে। সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে তারা বসতে শুরু করেছে বলে দাবি করলেও পুলিশ বলছে, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি হকারদের বিষয়ে।
রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হকারদের অনেকেই আবার তাদের জায়গায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। তবে তারা চৌকির বদলে পাকা ফুটপাতে কাপড় বিছিয়ে বেচা-কেনা করছেন।
এ ব্যাপারে হকারদের দাবি, বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফুটপাতে হকার বসার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। একারণেই তারা বসতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ হকার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াত সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত চার মাস ধরে ফুটপাতে হকার বসা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ ও সিটি করপোরেশন। জীবিকা বন্ধ হওয়ায় আন্দোলনে নামে হকাররা। এরই মধ্যে হরতাল ও অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশ আবারও হকারদের বসতে বলেছে। তবে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে যেন বসা যায়, সেটি মাথায় রাখতে বলেছেন। রাস্তা বন্ধ করে যাতে কেউ না বসে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরাও হকারদের একই নির্দেশনা পালন করতে বলেছি, যাতে কোনো হকার সড়ক বন্ধ করে বসতে না পারে। এমনকি ফুটপাতের একটা অংশ ফাঁকা রেখে বসতে বলেছি। বড় কোনো চৌকি যেন ব্যবহার করা না হয়, সে ব্যাপারেও বিশেষভাবে বলা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হলিডে মার্কেট থাকবে। এর বাইরে হকাররা প্রতিদিন আগের মতো বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসতে পারবে।’ তবে সেটি ঈদ পর্যন্ত, নাকি ঈদের পরও বসতে পারবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। হকাররা নিয়ম মেনে যদি বসতে পারে তাহলে ঈদের পরও বসলে সমস্যা থাকার কথা নয় বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশ কী, জানতে চাইলে সেকেন্দার হায়াত বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, গত ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী হকারদের মানবিক দিক বিবেচনা করে ব্যবসা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপাতি রাশেদ খান মেনন পুলিশ কমিশনার ও মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে রাশেদ খান মেনন হকারদের ফুটপাতে বসার পক্ষে কথা বললেও মেয়র কোনো কিছু বলেননি। মেয়র বলেছেন, আমি ডিসিশন নিয়েছি গুলিস্তান মতিঝিলে কোনো হকার বসবে না। এজন্য হলিডে মার্কেট চালু করা হয়েছে। এরপরেও আপনারা বসাতে চাইলে আমাকে যাতে ব্যবহার করা না হয়।’
হকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াত আরও বলেন, ‘হলিডে মার্কেট তেমন একটা চলছে না। তাই আগের জায়গাগুলোতে হকাররা বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মতিঝিল, পল্টন ও গুলিস্তানে বসার অনুমতি পেলেও এখনো নিউ মার্কেট ও গাউচিয়া এলাকায় বসার অনুমতি মেলেনি। তবে সরকারের উচ্চ মহলে দেন-দরবার চলছে, আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে সেখানেও হকাররা বসার অনুমতি পাবে।’
হকারদের ফুটপাতে বসার অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃঞ্চ পদ রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘হকারদের ফুটপাতে বসার অনুমতি কে দিয়েছে তা আমার জানা নেই। লিখিত পরের কথা মৌখিকভাবেও কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেই জানি। কারণ হকারদের তদারকির দায়িত্ব আমাকেই দিয়েছেন কমিশনার। অথচ অনুমতির বিষয়টি আমি জানি না।’
ফুটপাতে হকার বসার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অফিস ডে-তে কোথাও হকারদের বসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। হকাররা কোথায় অনুমতি পেয়েছে সেটাই দেখা হবে। নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। যাতে অফিস চলাকালীন কেউ বসতে না পারে।’
ডিএমপির নিয়মিত মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে হকারদের উচ্ছেদ ও পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে কনফারেন্সে উপস্থিত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন। কনফারেন্সে রমজান মাসে যাতে হকাররা সড়ক বন্ধ করে বসতে না পারে সেজন্য সবসময় টহল পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে ইফতারির আগে যেসব এলাকা ফাঁকা হয়ে যায় (যেমন মতিঝিল, গুলিস্তান) সেসব এলাকায় ফুটপাতে ইফতারির পর হকাররা বসতে পারে বলে আলোচনা হয়েছে। সেটা কোনোভাবেই যাতে সড়ক বন্ধ করে না হয় সেজন্য কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ঈদ পর্যন্ত আপাতত এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া হলিডে মার্কেটেই যাতে হকাররা সীমাবন্ধ থাকেন সেজন্য তাদের বোঝানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এদিকে পথচারীরা বলছেন, ফুটপাত হকারমুক্ত থাকায় এখন পায়ে হেঁটে চলাচল করে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। এটি যাতে কোনোভাবেই বন্ধ হয়ে না যায়।
গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার এলাকার ব্যবসায়ী আবু জাফর বলেন, ‘এখন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য পাই। কিছু দিন আগেও এমনটা ছিল না। এখন দেখছি, ফুটপাতে হকাররা আবার বসতে শুরু করেছে। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে গুলিস্তান এলাকা আবারও আগের মতো মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই/টিএস