৫৮ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি ঢাকা চিড়িয়াখানা
২১ মে ২০১৯ ১০:০৮
ঢাকা: পশু-পাখি নিয়ে শিশুদের কৌতূহলের শেষ নেই। কেবল শিশুরাই নয়, দেশের প্রান্তিক উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষটিও ঢাকা এলেই একবার ঢুঁ মেরে যেতে চান ঢাকা চিড়িয়াখানায়। কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা চিড়িয়াখানায় প্রতিবছর গড়ে ৪০ লাখের বেশি দর্শক সমাগম হয়। তবুও প্রতিষ্ঠার পর থেকে লাভের মুখ দেখতে পারেনি ঢাকা চিড়িয়াখানা।
সূত্র জানাচ্ছে, চিড়িয়াখানায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নানা বয়সী দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে প্রায় সারাবছরই। তারপরও লোকসান গুণছে রাজধানীর অন্যতম এই বিনোদনকেন্দ্র। আর এর পেছনের কারণ হিসেবে তারা বলছেন অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কথা।
নাম গোপন রাখার শর্তে ঢাকা চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় যে হারে বাড়ছে, সেই অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। ফলে প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি চিড়িয়াখানা। রয়েছে নীতিগত নানা ভুল সিদ্ধান্ত।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরে চিড়িয়াখানার রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর এই পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় করেছে ৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ জাতীয় চিড়িয়াখানা পরিচালনায় সরকারের লোকসান গুনতে হয়েছে ৩০ কোটি ৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিবছর গড় লোকসানের পরিমাণ ৬ কোটি ১২ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, চিড়িয়াখানা বাণিজ্যিক হলে লাভজনক হতো। এখন দর্শনার্থীরা ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ২শ একর জমি ঘুরে দেখতে পারেন। কমার্শিয়াল হলে পাঁচ একর জমি দেখতেই দুইশ টাকা দিতে হতো।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হলো দর্শনার্থীদের বিনোদন দেওয়া। পাশাপাশি দুর্লভ ও বিপন্নপ্রায় বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন, প্রাণী বৈচিত্র্য সংরক্ষণে শিক্ষা ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার এর অন্যতম উদ্দেশ্য। মুনাফা অর্জন চিড়িয়াখানার প্রধান উদ্দেশ্য নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা জনগণকে বিনোদন দিতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব বাড়াতে চেষ্টা করছি আমরা।
এক নজরে পাঁচ বছরে চিড়িয়াখানার আয়-ব্যয়
সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা চিড়িয়াখানার আয় ছিল ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ব্যয় ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয় ছিল ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ব্যয় ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় ছিল ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ব্যয় ১৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় ছিল ১০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ব্যয় ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চিড়িয়াখানার আয় ছিল ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ব্যয় ১৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কেবল গত পাঁচ অর্থবছর নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একইভাবে লোকসান দিয়ে আসছে জাতীয় চিড়িয়াখানা।
শিক্ষা, গবেষণা, প্রাণী বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা চিড়িয়াখানা নির্মাণ করা হয়। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর নির্মিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/জিএস/এটি