নতুন অ্যাপ ‘রেল সেবা’ কাজ করছে না
২১ মে ২০১৯ ১১:৫৬
ঢাকা: আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের অগ্রিম টিকিট দেওয়া। তবে, ৩০ মে’র টিকিট কাটতে অনলাইন বা অ্যাপের মাধ্যমে চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে, একইদিনের টিকিট কাটতে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনেও হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরেছেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও রেলের অ্যাপস ‘রেল সেবা’ (rail Sheba) তে প্রবেশ করা যায়নি। এরপর একবার প্রবেশ করা গেলেও ভেতরে টিকিট কেনার অপশনে যাওয়া যায় নি। ভেতরে ইন্টারফেস কাজ করছেন না এমনটা দেখা গেছে। এই ঘটনায় অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ভুক্তভোগী অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ জানাচ্ছেন।
রেলের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) জানায়, সোমবার (২০ মে) অ্যাপের মাধ্যমে ২ হাজারের বেশি টিকিট কাটা হয়েছে। অ্যাপে এক সঙ্গে টিকিট কাটতে পারেন মাত্র ৫০০ জন। এর বেশি সক্ষমতা নেই এই অ্যাপের। ঘন্টায় ১৫ হাজার টিকিটের সার্ভিস দিতে পারে রেল সেবা অ্যাপ।
সিএনএসবিডির জেনারেল ম্যানেজার (বিজনেস স্ট্রেট্যাজি এন্ড ডেভলপমেন্ট) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ২০ মে মেনটেন্যান্সের কাজ হয়েছে। এদিন, ২ হাজারের বেশি টিকিট কাটতে পেরেছেন মানুষ। রেলওয়ে তাদেরকে যে ধরণের সক্ষমতার মধ্যে সেবা দিতে বলে তারা সে ধরণের সুবিধা অ্যাপে দিয়ে রেখেছেন-বলেন কামরুল।
সিএনএসবিডি জানায়, এবার ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনে তিন পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমত মোবাইল এসএমএসে, দ্বিতীয়ত ওয়েবসাইট থেকে এবং তৃতীয়ত রেলের টিকিট কাটার সবশেষ ফিচার অ্যাপস-এর মাধ্যমে। সবমিলিয়ে মোট টিকিটের ৫০ ভাগ এই তিন পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা থেকে সবগুলো আন্ত:নগর ট্রেন মিলিয়ে দিনে প্রায় ৩০ হাজার ট্রেনের টিকিট রয়েছে। এর মধ্যে ৫ ভাগ রেলওয়ে কমকর্তা কর্মচারী ও ৫ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইন ও এসএমএস ও অ্যাপে পাওয়ার কথা।
সিএনএসবিডিকে দিয়ে রেলওয়ে টিকিট বিক্রির জন্য অ্যাপ তৈরি করেছে। সেই অ্যাপ গত এপ্রিল মাসে উদ্বোধন করা হয়। রেল সেবা নামের এই অ্যাপে এখন টিকিট কাটা যাচ্ছে না। শুরু থেকে অ্যাপ নিয়ে নানা অভিযোগ করে আসছিলেন টিকিট প্রত্যাশীরা। অ্যাপস এ টাকা কেটে নিলেও টিকিট আসেনি এমন অভিযোগ ছিল হরহামেশা।
এখন ঈদের টিকিট বিক্রির শুরুর আগেই অ্যাপে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে রেলের ই সেবাতেও টিকিট কাটা যাচ্ছে না।
সিএনএসবিডি রেলের প্রযুক্তিগত সুবিধা দেয়। এর মাধ্যমে টিকেটিং ব্যবস্থাপনাও করে তারা। তাদের সার্ভার বিকল হয়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ নিতে না পারারও অভিযোগ আছে প্রতি ঈদেই।
এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয় জানায়, ২০০৭ সালে সিএনএসবিডির সঙ্গে যে চুক্তি হয় সেখানে রেলের নিজস্ব লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। সেটা তারা করেনি। এছাড়া, ২০১২ সালে যখন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয় তখন এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরপর তিনমাস তিনমাস করে প্রায় ছ’মাস মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় সিএনএসবিডি। মামলা ওঠানোর জন্য যখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চাপ দেয়। তখন তারা নতুন করে আরও দুবছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।
এরপর তারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ পায়। ওই বছর নতুন করে চুক্তি নবায়ন করা হয়। ২০১৪ সালের ওই চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা ওই চুক্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা বিশদ বিষয়ে না জেনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এমনটা জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে এর একটি সূত্র। সিএনএসবিডি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান। ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনিই এটি দেখভাল করছেন। তার একান্ত সহকারি এখন এর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন-সিএনএসবিডি সূত্র এমনটা জানিয়েছে।
আগামী সেপ্টেম্বরে সিএনএসবিডি সঙ্গে রেলের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। টিকিট প্রত্যাশীরা চান সিএনএসবিডির চেয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় রেল টিকিট ও অ্যাপস সেবা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আইটি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের সঙ্গে টিকিট ব্যবস্থাপনা ও অ্যাপস সেবা দিতে আগ্রহ জানিয়েছে। এর মধ্যে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’, ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশসহ তিন চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
রেলভবন সূত্র জানায়, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে, সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে।
রেল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ জানান, সিএনএসবিডির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে তারা। এরপর দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া হবে। এক্ষেত্রে রেলমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।
রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব আতিকুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সিএনএসবিডির বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ নোট করে সংশ্লিষ্টদের সমাধানের জন্য পাঠিয়েছেন। প্রতিদিন টিকিট কাটতে গিয়ে নানা সমস্যা ও ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ এমন চিত্র দেখা গেছে এসব অভিযোগে।
সারাবাংলা/এসএ/জেএএম