‘নওফেল’ সেজে ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে প্রতারণাকারী তরুণ গ্রেফতার
২১ মে ২০১৯ ১৩:২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সেজে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করা সেই তরুণকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
গ্রেফতার ওই তরুণের নাম মো. ওসমান (২৬)। সোমবার (২০ মে) রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মে) চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতার ওসমানের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায়। ওসমান থাকেন নগরীর ঝর্ণাপাড়া এলাকায়। তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদ খাগড়াছড়ির একটি মসজিদে ইমামতি করেন।
আরও পড়ুন- নওফেলের নাম ভাঙিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ নেত্রীকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ
শাহ মো. আব্দুর রউফ জানান, ওসমান একইভাবে চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুবুল হক চৌধুরী এটলীর সঙ্গেও নওফেল সেজে প্রতারণা করেছে। এটলী বিষয়টি কোতোয়ালি থানাকে অবহিত করার পর তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এটলী ও ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে একই মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে প্রতারণা করা হয়েছে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ওসমানকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রউফ জানান, ওসমানকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মো. ইরফান নামে আইডি খোলে ওসমান। ফেসবুকেই সে সরকারি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিমার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। রিমার কাছে নিজের পরিচয় দেয় উপমন্ত্রী নওফেলের ছোট ভাই সালেহীন হিসেবে। রিমার কাছ থেকে সে বিকাশের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা আদায় করে।
অতিরিক্ত উপকমিশনার জানান, এর মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। তাতে আহত হন রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা। ওই সময় রিমার মাধ্যমে শ্রাবণী দিশার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ওসমান। নম্বর নিয়ে দিশাকে ফোনও দেয় সে। এসময় সে নিজেকে উপমন্ত্রী নওফেল বলে দাবি করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে। ১৮ মে দিশাকে নওফেল পরিচয়ে ফোন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাইয়ে দিতে দুই লাখ টাকা দাবি করে ওসমান।
এর আগে, গত রোববার (১৯ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রাবণী দিশা তাকে অপহরণচেষ্টার অভিযোগ তুলে ধরেন। এ ঘটনায় তিনি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলেও জানান। অপহরণচেষ্টার বিষয়টি শাহবাগ থানা তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত উপকমিশনার রউফ।
এদিকে, শিক্ষা উপমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে শ্রাবণী দিশার সঙ্গে প্রতারণার খবর প্রকাশ পেলে চট্টগ্রামে উপমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী নাজিউর রহমান শিকদার অনীক কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে ওসমানকে।
পরে কাজী মাহবুবুল হক চৌধুরী এটলী সারাবাংলাকে জানান, গত ১০ মে এটলী ঢাকায় ছিলেন। ওই দিন দুপুরে নওফেলের পিএস পরিচয় দিয়ে তাকে ফোন দেওয়া হয়। ফোন করে তিনি নওফেলের ফোনকল রিসিভ করছেন না কেন, জানতে চাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর নওফেল সেজে ফোন করে এটলীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। পরদিন আবার পিএস পরিচয় দিয়ে ফোন করে এটলীকে নওফেল তার বনানীর বাসায় দেখা করতে বলেছেন বলে জানানো হয়। এছাড়া রাজনৈতিক পদে থাকতে হলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে বলেও এটলীকে জানায় ওসমান। এতে এটলীর সন্দেহ হলেও তিনি বনানীতে নওফেলের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, নওফেল চীনে আছেন। তখন তার কাছে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়। চট্টগ্রামে এসে তিনি কোতোয়ালি থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওসমান কণ্ঠস্বর নকলে খুবই পারদর্শী। সে একাধারে উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তার ছোট ভাই ও পিএসের কণ্ঠ নকল করতে পারে। তার কথা বলার ভঙ্গি এমন যে ফোন করলেই যে কেউ ভাববে সে উপমন্ত্রী নওফেল স্যার। নিজের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করলেও সেই নম্বর দিয়ে খোলা ইমো অ্যাকাউন্টে সে নওফেল স্যারের ছবি জুড়ে দেয়। এভাবে সে লোকজনকে বিভ্রান্ত করতেও সক্ষম হয়েছে।’
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওসমান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে বিভিন্ন সময়ে দারুল ফজল মার্কেটে আওয়ামী লীগের অফিসে যাতায়াত করত। সেখানে গিয়ে সে নেতাকর্মীদের আচরণগুলো লক্ষ্য করত এবং অনেক নেতার সঙ্গে পরিচয় ও সখ্য গড়ে তুলেছিল। এছাড়া সে কয়েকবার উপমন্ত্রী মহোদয়ের চট্টগ্রামের বাসায়ও গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে সে উপমন্ত্রী মহোদয়ের কথা বলার স্টাইল ও কণ্ঠস্বর গভীরভাবে অনুকরণ করে।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর