বাজেটে ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা
২১ মে ২০১৯ ২৩:২৮
ঢাকা: আগামী অর্থ বছরে (২০১৯-২০) বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে আয়করের পাশাপাশি ভ্যাটের উপর জোর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আগামি অর্থ বছরের বাজেট। আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
বুধবার (২২ মে) অর্থমস্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্ভাব্য বাজেট প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন। এর আগে গত সোমবার সকালে আগামী অর্থবছরের বাজেটের খসড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় বাজেটের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করা হয়। আজ বুধ ও বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের রাজস্ব পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নিয়েই চূড়ান্ত করা হবে নতুন অর্থবছরের বাজেট। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
এদিকে, আসন্ন বাজেট মূলত ভ্যাট আইনকে ঘিরেই হবে। আগামী এক জুলাই থেকে এই আইন কার্যকর হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে ভ্যাটের পরিধি বাড়ানো পাশাপাশি তিনটি পৃথক হারে বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া ভ্যাট ফাঁকি রোধে অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে ভ্যাট হার, ট্যারিফ মূল্য, সম্পূরক শুল্ক, সেবা খাতে ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এরই প্রতিফলন দেখা যাবে আগামীর বাজেট।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়ানো হবে, তবে তা সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়। কর ও ভ্যাটের আওতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে এটি করা হবে। দুটো বিষয়েও উপর সমান ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। যারা কর দিচ্ছেন না, অথচ উপযুক্ত তাদের কর নেটের আওতায় আনা হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আগামী বাজেটের আকার হবে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এই ব্যয় মেটাতে রাজস্ব খাত থেকে মোট আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৩.১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বছরে ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি আয় করতে হবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১১.৮ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআর কর রাজস্ব পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১১.৩ শতাংশ।
এনবিআরবহির্ভূত কর রাজস্ব পরিমাণ হচ্ছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ০.৩ শতাংশ।
এখানে উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে কর রাজস্বের পরিমাণ হচ্ছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর কর রাজস্ব পরিমাণ ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর রাজস্ব পরিমাণ হচ্ছে ৭ হাজার ২২০ কোটি টাকা। চলতি বছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ৩৪ হাজার ১৭০ কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগামী অর্থবছরের শুরুতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালাও কার্যকর হবে। পাশাপাশি শুল্ক আইন প্রণয়ন হচ্ছে। এসব কারণে আমরা আশা করছি, আগামীতে রাজস্ব আয়ের গতি আরও বাড়বে। এতে কর রাজস্বও বাড়বে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আসন্ন বাজেটে কর হার না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি করা হবে আইনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে। অধিকসংখ্যক মানুষকে আয়করের আওতায় আনা, ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হবে না। তবে করসীমা বাড়ানো বা অপরিবর্তিত থাকবে কিনা- সেই সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে কর আদায়ের প্রত্যেক উপজেলায় অফিস স্থাপন করা হবে। বিত্তবানদের করের আওতায় আনা হবে। বাজেটে সেদিক নির্দেশনা থাকবে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির টার্নওভার ট্যাক্স আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। মূলত ফাঁকি বন্ধের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। দেশীয় শিল্প বিকাশের স্বার্থে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন, মোটরসাইকেল শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালের মধ্যে কর জিডিপি অনুপাত ১৫.৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
পাশাপাশি কর অব্যাহতির যৌক্তিকরণের পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত অগ্রাধিকার খাতকেও প্রণোদনা দেওয়া হবে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে বাংলায় যুগোপযোগী আয়কর আইন প্রণয়ন করা হবে।
এছাড়া উৎসে আয়কর কর্তন ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা হবে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী কর তথ্য ইউনিট গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে কর ফাঁকি উদঘাটন ও করদাতা শনাক্ত করা হবে।
সারাবাংলা/এইচএ/এমও