পাকিস্তানে এইচআইভি মহামারি, আক্রান্ত প্রায় ৪৫০ শিশু
২২ মে ২০১৯ ০৯:৫৪
পাকিস্তানে গত একমাসে ৬০০’র বেশি মানুষকে এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। তাদের মধ্যে একমাস বয়সি শিশু থেকে ১৫ বছর বয়সি কিশোর পর্যন্ত রয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। তবে ঠিক কী কারণে এই এইচআইভি সংক্রমণ সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু জানা যায়নি। খবর বিবিসির।
এইচআইভির প্রথম উপসর্গ দেখা দেয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, সিন্ধ প্রদেশের রাতোদেরো নামের ছোট একটি শহরে। বেশ কয়েকটি শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়। কিন্তু বেশ কয়েকদিন যাওয়ার পরও জ্বর না সারলে অভিভাবকেরা তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসক ড. ইমরান আরবানি শিশুদের রক্ত পরীক্ষা করার পর ভয়াবহ এই রোগের সংক্রমণ আবিষ্কার করেন।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে ১৫ শিশু এইচআইভি পজিটিভ প্রমাণিত হয়। যদিও তাদের কারোর বাবা-মা’র শরীরে এইচআইভির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু তখনো ইমরান জানতেন না, এ কেবল শুরু, সামনে আরও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।
গত এক মাসে সবমিলিয়ে ৬০৭ জনের বেশি মানুষকে এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যা প্রায় ৪৫০ জন। এইচআইভি পরীক্ষা করতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ক্যাম্প চালু করেছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে এইচআইভি ছড়ানোর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৬ সালে সিন্ধ প্রদেশের লারকানা শহরে এমন ঘটনা ঘটে। সেসময় ১ হাজার ৫২১ জন মানুষ এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়। তৎকালীন সময়ে শনাক্ত হওয়া মানুষদের বেশিরভাগই ছিলেন পুরুষ। তখন ধারণা করা হয়েছিল, স্থানীয় যৌনকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনেই এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে তাদের শরীরে। কিন্তু এবারের মহামারি কিছুটা ভিন্ন।
সিন্ধ এইডস কনট্রোল প্রোগ্রাম (এসএসিপি) প্রধান ড. আসাদ মেমন বিশ্বাস করেন, ২০১৬ সালের ঘটনার সঙ্গে এবারের সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে, তবে সরাসরি নয়।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ভাইরাসটি উচ্চ পর্যায়ের ঝুঁকিসম্পন্ন ব্যক্তিদের (যৌনকর্মী) শরীরে ছিল ও সেখান থেকে স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তারদের অসাবধানতার কারণে তা অন্যান্যদের মধ্যে ছড়িয়েছে।
আগা খান হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিশুদের মধ্যে এইডস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. ফাতিমা মির রাতোদেরোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। তিনিও মেমনের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেন, খুব সম্ভবত অসতর্ক চিকিৎসা চর্চার জন্যই এমনটা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো শিশু তিন ভাবে এইডস আক্রান্ত হতে পারে। হয়তো একই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো মায়ের বুকের দুধ পান করে, রক্তদানের মাধ্যমে ও কোনো সিরিঞ্জ বা অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম দিয়ে।
তিনি জানান, রাতোদেরোতে বেশিরভাগেই মা’র শরীরে এইচআইভির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, খুব কম শিশুই রক্তদানের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। তাই তাদের ক্ষেত্রে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সিরিঞ্জ বা অন্যকোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে।
ফাতিমা ও মেমনের সঙ্গে একমত স্থানীয় কর্মকর্তারাও। সাম্প্রতিক মহামারির পর প্রায় ৫০০ অনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ড. মুজাফফর ঘাংরো নামের একজন স্থানীয় শিশু বিশেষজ্ঞকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে এইডস ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পাকিস্তান সরকার।
সারাবাংলা/আরএ