নিঃসঙ্গ জীবন: ঘোড়ার সঙ্গী গাধা, গণ্ডারের সঙ্গী ভেড়া
২২ মে ২০১৯ ১০:১৫
ঢাকা: জাতীয় চিড়িয়াখানায় ১৩৫ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এছাড়া পাখি ও মৎস্য প্রজাতির ২৬৯৩ টি ধরনের পশু-পাখি রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২৬ প্রজাতির পশু- পাখি বিপরীত লিঙ্গের অনুপস্থিতিতে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছে।
নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতে করতে এরইমধ্যে কয়েক প্রজাতির পশুপাখি মারা গেছে। তবে সঙ্গীহীন এসব প্রাণীগুলোকে সঙ্গ দিতে উপায় বের করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো খাঁচায় ঘোড়ার সঙ্গে গাধা, গণ্ডারের সঙ্গে ভেড়া দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার (২১ মে) সারাবাংলাকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় বর্তমানে কয়েকটি প্রজাতির পশুপাখি সঙ্গীবিহীন অবস্থায় রয়েছে। তাদের একাকিত্ব জীবনের অবসানে আমরা কাজ করছি।’
ওই কর্মকর্তা জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণ অফ্রিকা থেকে ১১টি প্রাণী আনা হচ্ছে। এসব প্রাণী আনা হলে কয়েকটির ক্ষেত্রে মেইল-ফিমেল ব্যালেন্স হবে। ভবিষ্যতে আরও কিছু পশুপাখি এনে এই সমস্যা সমাধান করা হবে।
চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, বছরের পর বছর সঙ্গীবিহীন বসবাস করায় বিপরীত লিঙ্গবিহীন এসব প্রাণীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনো কোনো প্রাণী নিঃসঙ্গ থাকায় তারা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
সঙ্গীবিহীন প্রজাতির মধ্যে অন্যতম হলো, আফ্রিকান গন্ডার ১টি (স্ত্রী), হরিণ ৪ টি (স্ত্রী), চিত্রা হায়েনা ১টি (স্ত্রী), মেছো বিড়াল ১টি (স্ত্রী), ভাল্লুক বিড়াল ২টি (স্ত্রী), উল্লুক ২টি (স্ত্রী), কেশোয়ারী ১টি (স্ত্রী), ভোদর ১টি (স্ত্রী), গোখড়া সাপ ২টি (স্ত্রী), দাড়াস সাপ ১টি (স্ত্রী), হলুদ টিয়া (১টি স্ত্রী), শিম্পাঞ্জী ১টি (পুরুষ), সাদা পেলিক্যান ১টি (পুরুষ), ডেমসির সারস ১টি পুরুষসহ আরও বেশ কিছু প্রাণী।
সূত্র জানায়, চিড়িয়াখানার একমাত্র পুরুষ শিম্পাঞ্জিটি ১৫ বছর চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে কয়েকবছর আগে মারা গেছে। একইভাবে পুরুষ ও স্ত্রী সঙ্গীবিহীন থাকায় গত কয়েক বছরে মারা গেছে চারটি স্ত্রী সাম্ভা হরিণ। এছাড়া একটি স্ত্রী হায়েনাসহ বেশ কয়েকটি মূল্যবান প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
নিঃসঙ্গ এসব প্রাণিগুলোর সঙ্গীর অভাব পূরণে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে নতুন পশু-পাখি ক্রয় করার জন্য বেশ কয়েকবার প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে একাকী জীবনের অবসান হয়নি এসব প্রজাতির পশু-পাখির।
সূত্র জানায়, চিড়িয়াখানায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপনকারী প্রাণীগুলোর জন্য ৩৯ প্রজাতির ৩১০টি পশুপাখি ক্রয় করার জন্য ২০১৪-২০১৫ এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে একটি প্রকল্প হাতে নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো পশুপাখি আনা যায়নি। তবে ২০১৪-১৫ ও ১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ক্রয় তালিকায় বেশ কয়েকটি পশুপাখি ছিল। সেগুলোর মধ্যে ছিল, লাউডগা সাপ, সোনালি সাপ, গোলবাহার, লাল মুনিয়া, হোয়াট কিং কবুতর, আচিল মুরগী, গাং কবুতর, তিতির, উট, লাল ক্যাংগারু, জায়ান্ট ইল্যান্ট, স্যারল, আফ্রিকান সিংহ, সাদা বাঘ, চিতা বাঘ, চিতা, কালো বাঘ, ম্যান্ড্রিল, কলাবাস বানর, ধুসর পেলিক্যান, সোনালী ফিজেন্ট। কিন্তু নানা জটিলতায় এসব পশুপাখি আনা যায়নি। পলে এ সব পশুপাখির একটিও চিড়িয়াখানায় নেই।
অন্যদিকে ময়না, ডোরাকাটা হায়না, ফ্ল্যামিংগো ও সালফার ক্রেস্টেড কাকাতোয়া ২/১টি করে থাকলেও এদের মজুদ বাড়াতে প্রস্তাবিত ক্রয় তালিকায় এদের নাম ছিল। চিড়িয়াখানায় এসব প্রজাতির পশুপাখি বিপরীত লিঙ্গের অনুপস্থিতিতে এককভাবে বসবাস করায় বেশকিছু প্রাণিকুলের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। তাছাড়া সঙ্গীবিহীন অবস্থায় কোনো পশু-পাখিকে বছরের পর বছর রাখা চিড়িয়াখানার মূল নীতির পরিপন্থি। এটি নির্দয় আচরণ বলেও জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
তাদের মতে, একাধিক পশু একাকিত্বের কারণে একদিকে প্রাণিকুল নির্জীব থাকে, তাদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায় না। তাদের আচরণগত পরিবর্তনসহ শরীরে নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। এতে করে তাদের স্বাভাবিক আয়ুকাল কমে যায়।
চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণিগুলোর মধ্যে মাংসাশী প্রাণী রয়েছে ১১ প্রজাতির ৩৩টি, বৃহৎ তৃণভোজী ১৮ প্রজাতির ৩১৬টি, ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণী ১৫ প্রজাতির ১৯০টি, সরীসৃপ ৯ প্রজাতির ৬৪টি, পাখি ৫৬ প্রজাতির ১ হাজার ১৫১টি, মোট প্রাণী ও পাখির সংখ্যা ১০৯ প্রজাতির ১ হাজার ৭৫৪টি, অ্যাকুরিয়ামে রক্ষিত মাংস প্রজাতিসমূহ ২৬ প্রজাতির ৯৩৯টি। এসব পশু-পাখির জন্য চিড়িয়াখানায় ১৩৭টি খাঁচা রয়েছে।
দর্শনার্থীদের বিনোদন, দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজননের, শিক্ষা-গবেষণা প্রাণী বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/জিএস/একে