মানবাধিকার কমিশন গঠনে স্বচ্ছতা চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
২২ মে ২০১৯ ১৪:৩০
ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) গঠন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতাসহ সংস্থাটির আইনি সংস্কার এবং ক্ষমতা বাড়ানোরে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি যাতে প্রকৃত মানবাধিকার কমিশন হিসেবে কাজ করতে পারে সেজন্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিনের কাছে আবেদনও জানিয়েছে তারা। মঙ্গলবার (২১ মে) বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পোর নেতৃত্বে ৭ জনের একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে এই আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, কার্যকর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দেখতে চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সংস্থাটির আইনি কাঠামো খুবই দূর্বল। এছাড়া স্বাধীনভাবে অর্থ খরচ বা সরকারি লোকদের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়া তদন্ত করার ক্ষমতাও নেই প্রতিষ্ঠানটির।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন,পাশাপাশি কমিশনের গঠন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কমিশনের নেতৃত্বে একজন প্রকৃত মানবাধিকার নেতাকে চায় তারা।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো সারাবাংলাকে বলেন, আমরা জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে সংস্থাটির আইন সংস্কার করে কার্যকর মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছি। আমরা চাই, আগামী কমিশন গঠন প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে হোক।
মিয়া সেপ্পো সারাবাংলাকে আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অন্যতম লক্ষ্য ১৬ অর্জন করতে হবে। এই ১৬ নম্বর লক্ষ্যটি হচ্ছে সুশাসন বিষয়ে। সুশাসন নিশ্চিত না হলে টেকসই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না। সুশাসন নিশ্চিতের অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মানবাধিকার ইস্যূ। এ জন্য নিরপেক্ষ এবং যথার্থ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করতে হবে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, আইন অনুযায়ী, কমিশন গঠনের বিষয়ে সংসদের স্পিকারের ভূমিকা রয়েছে। সামনের আগস্টে কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো নেতৃত্বে একটি কূটনৈতিক দল এসেছিল। এই বিষয়ে তাদের কিছু পরামর্শ ছিল যা আমাকে জানিয়েছে। এই বিষয়ে ওরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ওরা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) আমাদের মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালি করতে সমর্থন দিতে চায়। পাশাপাশি এই কমিশনের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়েও তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করতে চায়। আর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদ যাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং আবার পুর্নগঠন হবে তাই তারা তাদের কথা জানাতে এসেছিল’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সারাবাংলাকে জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালি করা প্রয়োজন। কমিশনকে শক্তিশালি করতে হলে কিছু আইনি সংস্কারের প্রয়োজন আছে। আইনের কোন কোন জায়গাতে সংস্কার প্রয়োজন তা উল্লেখ করে আমরা সরকারকে লিখেছি। কমিশনকে শক্তিশালি করতে সরকারের পক্ষ থেকে কথা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের ইশতেহারেও উল্লেখ আছে যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালি এবং কার্যকর করা হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দুই ধরণের সমস্যা রয়েছে। একদিকে, সংস্থাটির আইনে দূর্বলতা রয়েছে। কাজ করার জন্য এই সংস্থাটিকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে সংস্থাটিকে তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। সাধারণত তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের ক্ষমতা ছাড়া এই ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে না।
তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব গুণাবলিতে ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে প্রায়ই দেখা যায় যে প্রতিষ্ঠানটি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে না। যতোটুকু আইনি সামর্থ্য রয়েছে সেটুকুও প্রয়োগ করতে পারে না নেতৃত্ব গুণাবলি না থাকার কারণে। যেমন, সূবর্ণচরের ঘটনায় সংস্থাটি বিতর্কিত ভূমিকার সৃষ্টি করেছে।
সারাবাংলা/জেআইএল/জেডএফ