রাত পোহালেই ভোট গণনা, ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা বিরোধীদের
২২ মে ২০১৯ ১৮:০০
ম্যারাথন প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণের পর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশে এবার ফল ঘোষণার পালা। ভারতের লোকসভায় কারা সরকার গঠন করবে তা জানা যাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মে)। এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোট গণনা, চলবে রাত অবধি। তবে ফল ঘোষণা নিয়ে এখনই তৈরি হয়েছে জটিলতা। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২২টি বিরোধীদল অভিযোগ করেছে বিজেপি সরকার ও নির্বাচন কমিশন, ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) গণনায় কারচুপির আশ্রয় নেবার পাঁয়তারা করছে।
তাই ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা আনতে বিরোধীদের দাবি, যেসব ইভিএম কেন্দ্রে ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফিকেশন পেপার অডিট ট্রায়াল) সুবিধা রয়েছে, সেসব কেন্দ্রের বুথগুলোতে ভিভিপ্যাট আগে গুণতে হবে। তারপর তার সঙ্গে ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখতে হবে। তখনই বুঝা যাবে ইভিএমের মাধ্যমে অন্যান্য কেন্দ্রে চুরি হচ্ছে কি না।
ভিভিপ্যাট কি
ভারতে নির্বাচনে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ নতুন নয়। এমন বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নির্দেশনা দেয়। সেই রায়ে বলা হয়, প্রতিটি আসনে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫টি কেন্দ্রে ভিভিপ্যাট স্লিপ ও ইভিএমের ভোট প্রয়োজনে যেন মিলিয়ে দেখা হয়।
ভোটকেন্দ্রে ইভিএম যন্ত্রের পাশেই রাখা হয় ভিভিপ্যাট নামে যন্ত্রটি। ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার পর কোনো ভোটার যে প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, তার নাম, তালিকার ক্রমিক সংখ্যা ও নির্বাচনের প্রতীক ভিভিপ্যাটের ব্যালট স্লিপে ছাপানো অক্ষরে প্রমাণ হিসেবে থাকে। পরে সেই তথ্য-সম্বলিত স্লিপ জমা হয়ে যায় ড্রপবক্সে। এই দুটি হিসেব থেকে পরবর্তীতে বুঝা যায় ইভিএমে ভোট গণনা কোনো অমিল হলো কি না।
কেন ভোট চুরির এমন আশঙ্কা
নির্বাচনের নিয়ম অনুসারে ভারতে কয়েক দফায় ভোট হয়। তাই ভোটগ্রহণের অনেক পরেই গণনা করা হয় ব্যালট পেপার বা ইভিএম হিসেব। এসময়ে ব্যালট বাক্স অথবা ইভিএম মেশিনগুলো কঠোর নিরাপত্তায় সংরক্ষণ করা হয় রাজ্যগুলোর ‘স্ট্রংরুমে’। সব পর্বের ভোটগ্রহণ শেষে একসঙ্গে শুরু হয় গণনা।
তবে মঙ্গলবার (২১ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায় ‘স্ট্রংরুমে’ ইভিএম নিয়ে ঢোকার একটি দৃশ্য। তাই বিরোধীরা এ বিষয়ে তাদের সন্দেহ ও অভিযোগের কথা জানান। ভারতের নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছে, ভোটগ্রহণের দিন যান্ত্রিক ত্রুটির আশঙ্কায় বিকল্প কিছু ইভিএম-ভিভিপ্যাট তৈরি থাকে। ওই ভিডিওতে হয়তো সেসব দেখা গেছে।
কি বলছেন ক্ষমতাসীন মোদি ও বিজেপি
এদিকে ইভিএমে কারচুপি বিষয়ে বিরোধীদলগুলোর আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ভোট চুরির অভিযোগকে ‘অহেতুক বিতর্ক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার বিজেপির জোট এনডিএ’র শরিক দলগুলো নির্বাচনে সম্ভাব্য জয়ের পর করণীয় ঠিক করতে নৈশভোজের আয়োজন করে। মোদি সেই আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে উন্নত, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভারত গড়ায় কাজ করবেন।
সতর্ক থাকতে কর্মীদের নির্দেশ রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের
ইভিএম নিয়ে চলমান বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তার দলের সদস্যদের ‘ভয়’ না পাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রাহুল টুইটারে লিখেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ। সতর্ক থাকুন। ভয় পাবেন না। আপনারা সত্যের জন্য লড়াই করছেন। বুথ ফেরত জরিপের ফলে হতাশ হবেন না।’
কর্মীদের পরিশ্রম বৃথা যাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুথ ফেরত জরিপের পূর্বাভাস
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর বুথ ফেরত জরিপ মতে, ভোটে বিজেপি জিততে পারে ২৭৭ থেকে ৩৪৭ আসন। অপরদিকে কংগ্রেস জেতার সম্ভাবনা ৯৩ থেকে ১৩২ টি আসন। অন্যান্যরা জিততে পারে ৮২ থেকে ১১২ টি আসন। যেকোনো দলের জন্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২।
প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল শুরু হয় ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোট শেষ হয় ১৯ মে। লোকসভার ৫৪২টি আসনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নিবন্ধিত ছিলেন ৯০ কোটি ভোটার।
দ্য হিন্দুস্থান টাইমস থেকে অনূদিত
সারাবাংলা/ এনএইচ
কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদি নির্বাচন বিজেপি বুথ ফেরত জরিপ ভারত ভারতে নির্বাচন ভোটের ফল রাহুল গান্ধী লোকসভা