Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘তারা প্রমাণ করুক, দুর্নীতি হয়নি’


২৩ মে ২০১৯ ১৭:৫৫

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাই ফলাফল বাতিলের দাবি অযৌক্তিক এবং পুনঃপরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই।

কর্তৃপক্ষের দাবি, লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণরাই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তবে লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ চিকিৎসকরা বলছেন, ‘আমরা সব তথ্যসহ প্রমাণ দিয়েছি, সর্বোচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। তারা এখন আদালতেই প্রমাণ করুক, যে দুর্নীতি হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

লিখিত পরীক্ষার ফল নিয়ে গত ১৯ মে উচ্চ আদালতে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিটকারী একাধিক চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ভরসা এখন সর্বোচ্চ আদালত, আমরা আদালতে লড়বো।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রশ্ন করলে তারা বলেন, ‘তারা তাদের পক্ষে নিশ্চয়ই সাফাই গাইবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এখন বলছেন, তিনি পরীক্ষা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তিনি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন। সে প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। সেটা গণমাাধ্যমকেও দেওয়া হয়েছে।’

‘তারা আবার পরীক্ষা গ্রহণ করুক। যিনি মেধাবী তিনি সবসময়ই মেধাবী এবং সব পরীক্ষাতেই তিনি উত্তীর্ণ হবেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছে বিভিন্ন আবদন দিয়েছি, কিন্তু তারা সেগুলো আমলে নেননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা তদন্ত কমিটি গঠন করলেও বোঝা যেত তারা কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছেন, অথচ সেটা তারা করেননি’, বলেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

বিজ্ঞাপন

তারা আরও বলেন, ‘বয়স বাড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া, ডেন্টালের শিক্ষার্থীদের এমবিবিএসের প্রশ্নপত্র দেওয়াসহ অনেক প্রমাণ গণমাধ্যমে এসেছে। এরপরও তারা যদি সেটা স্বীকার না করেন তাহলে আর আদালতে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।’

জানা যায়, ২০০টি মেডিকেল অফিসারের পদে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএসএমএইউ কর্তৃপক্ষ। প্রথম দফায় নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলেও সেটি পিছিয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার দিন ঠিক করা হয়। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রশ্নপত্রও ছাপানো হয়। কিন্তু অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত করে। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হওয়ার দেড় বছর পর গত ২২ মার্চ সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

নিয়োগ পরীক্ষায় ২০০ জনবলের বিপরীতে অংশ নেন আট হাজার ৫৫১ জন চিকিৎসক। একটি পদের বিপরীতে অংশ নেন ৪৩ জন।পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ১২ মে। এতে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হন ৭২৯ জন। এই তালিকায় যাদের নাম আসেনি তারা নানা অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেছেন।

চাকরিপ্রার্থীদের আরও অভিযোগ—পরীক্ষা হলে ডেন্টালের অনেক শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস এর প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা হলে মৌখিকভাবে এবং পরে লিখিত অভিযোগ করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা ৩২ বছর থাকলেও এর চেয়ে বেশি বয়সের অনেকেই অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজর ৩৭ বছর বয়সী একজনের জন্য লিখিত অভিযোগ করা হলেও সে অভিযোগেরও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। তাদের কেউ কেউ লিখিত পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণও হয়েছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ১০ বছরের কোনো পরীক্ষাতে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি।’

তারা রিট করেছেন আমরা ‘কন্টেস্ট’ করবো, কোনো অসুবিধা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছ্বতার সঙ্গে যা করার করেছি। ফলাফল প্রকাশের পর প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এটা বললেই হয়ে গেল না।’ পরীক্ষা যখন হলো তখন তাদের কোনো অভিযোগ ছিল না কেন বলেও প্রশ্ন করেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

স্বজনপ্রীতির অভিযোগ বিএসএমএমইউ’র নিয়োগ পরীক্ষায়

তিনি বলেন, ‘যাদের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, তাদের একজনের আবেদন প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের সময় ধরা পড়ায় তার আবেদন লিখিত পরীক্ষার আগেই বাতিল করা হয়েছে। আর ডা. বিদ্যুৎ কুমার সূত্রধর নামে অন্য আরেকজন প্রার্থী তার বয়সের প্রকৃত তথ্য গোপন করে আবেদন করেছে এবং লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর ডেন্টালের পরীক্ষাদের প্রশ্ন বিতরণের সময় কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে এবং পরীক্ষার হলেই তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। তাই এ নিয়ে কোনো ধরণের বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ নাই।’

তাদের পরীক্ষা বাতিলের দাবি অযৌক্তিক, তাই ফলাফল বাতিল বা পুনঃপরীক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ নাই বলেও জানান অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার পরীক্ষার ফল বাতিল করে পুনঃনিরীক্ষণের দাবিতে রোববার (১২ মে) থেকে বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে টানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা।

সারাবাংলা/জেএ/এমও

বিএসএমএমইউ বিএসএমএমইউ উপাচার্য মেডিকেল অফিসার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর