হাওরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে আসছে বিশেষ প্রকল্প
২৬ মে ২০১৯ ১০:৩২
ঢাকা: আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে হাওর অঞ্চলের ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক ও একাডেমিক ভবনের অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে হাওর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি, শিক্ষার গুণগতমান বাড়ানো এবং শিক্ষার বিস্তারের মাধ্যমে মানবসম্পদে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খরচ হবে ৪০১ কোটি ২৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ‘কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলাকার নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহের উন্নয়ন’ প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এর মধ্যেই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদ্য অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, হাওরের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। বৈষম্য দূর করতে এসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলার বড় হাওরটি অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন ও নিকলী উপজেলা নিয়ে গঠিত। ৯ লাখ ৯০ হাজার ৩৯৬ হেক্টর আয়তনের এই বিশাল এলাকার জনগণ বাংলাদেশের অন্যান্য সব এলাকা থেকে পিছিয়ে। অষ্টগ্রামের সাতটি ইউনিয়ন, ইটনার আটটি ইউনিয়ন, মিঠামইনের আটটি ইউনিয়ন ও নিকলীর আটটি ইউনিয়নে বসবাসকারী জনগণের শিক্ষার হার যথাক্রমে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষিতের হার ৭১ শতাংশ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্য শিক্ষিতের হার কম হওয়ার অন্যতম কারণ শিক্ষার আনুষাঙ্গিক সুবিধা কম থাকা। এজন্য প্রকল্পে কিশোরগঞ্জ জেলার এই চার উপজেলার ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও অন্যান্য উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, প্রকল্পভুক্ত চারটি উপজেলায় মোট ৪৭টি স্কুল-কলেজ রয়েছে। ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টি অর্থাৎ ৫০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পভুক্ত ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান আটটি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ১৭টি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সক্ষমতার কোনো তথ্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) দেওয়া হয়নি। দেশব্যাপী ছয় হাজার ২৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যমান ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ শীর্ষক দুইটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পে প্রস্তাবিত ১০টি বিদ্যালয়ও এসব প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অধ্যক্ষদের জন্য চারটি দুই তলা ভিতবিশিষ্ট দুই তলা এবং প্রধান শিক্ষকদের জন্য চারটি একতলা ভিতবিশিষ্ট একতলা বাসভবন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।
একজন কর্মকর্তাকে অস্থায়ীভাবে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ করা হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে। প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত পরিপত্র অনুসারে ৫০ কোটি টাকার অধিক খরচের প্রকল্পে পূর্ণকালীণ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিধান রয়েছে। এজন্য একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ এবং এ ধরনের প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রকল্প কার্যালয়ের ঢাকার পরিবর্তে প্রকল্প এলাকায় স্থাপনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় একাডেমিক ভবন, হোস্টেল, বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার এবং আইসিটি ল্যাবের জন্য আসবাবপত্র সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া আইসিটি ল্যাব এর জন্য আইসিটি উপকরণ সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বাস্তবায়নাধীন নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন এবং নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পগুলোর আওতায় এই প্রকল্পের প্রস্তাবিত ১০টি বিদ্যালয়ে প্রতিটিতে ৯টি শ্রেণিকক্ষে জন্য ১৫০টি জোড়া করে হাই লো বেঞ্চ সংস্থান রয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/জেএএম