Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ বছরে কোটিপতি ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৬৬ হাজার


২৭ মে ২০১৯ ১০:০৬

ঢাকা: দেশে ব্যাংক থেকে কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন— এমন ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বর্তমানে ৯১ হাজার ১৭৫ জন। এসব ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ বছরেই কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন ৬৫ হাজার ৯৩৯ জন। অর্থাৎ, এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন ৬ হাজার ৫৯৩ জন। আর তাদের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬২৯ টাকা।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঋণ বিতরণ বিষয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। আর এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বড় ঋণগ্রহীতারাই বেশি ঋণখেলাপি হচ্ছেন। তাই বড় গ্রহীতাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইও বেশি হওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টোটা। বড় ঋণগ্রহীতারা যত সহজে ঋণ পান, ছোট ছোট উদ্যোক্তারা তত সহজে ঋণ পাচ্ছেন না। ফলে ঋণগ্রহীতাদের ৭২ শতাংশই হয়ে পড়েছেন কোটিপতি ঋণগ্রহীতা। এটা হতে পারে না।

মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, কোনো কোনো ব্যাংক আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেশি করছে। ফলে অধিকাংশ ব্যাংক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এটা উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যায়।

আরও পড়ুন:- গত ১০ বছরে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ৫৬ হাজার ৪শ

কোটিপতি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে

২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন। পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এমন ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৯৫১ জনে। অর্থাৎ, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছরে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহণকারী বেড়েছে ২৩ হাজার ৭৪৫ জন। এই সময়ে গড়ে প্রতিবছর কোটিপতি ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৪ হাজার ৭৪৯ জন করে।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতা বেড়ে দাঁড়ায় ৯১ হাজার ১৭৫ জনে। সেই হিসাবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে কোটিপতি ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৪২ হাজার ২২৪ জন, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই পাঁচ বছরে এসে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতা বেড়েছে প্রতিবছর গড়ে ৮ হাজার ৪৪৪ জন করে।
মোট ঋণগ্রহীতার ৭২ শতাংশ নিয়েছেন কোটি টাকা ঋণ

বিজ্ঞাপন

২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায়, কমপক্ষে এক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন— এমন ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন। তাদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। ওই সময় ঋণগ্রহীতাদের ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ ছিলেন কোটি টাকা ঋণগ্রহীতা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। তখন মোট ঋণগ্রহীতার ৬৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। আর এই পাঁচ বছরে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতাদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭ কোটি টাকা।, যা ২০০৮ সাল পর্যন্ত কোটি টাকা ঋণগ্রহীতাদের মোট ঋণের প্রায় দেড়গুণ।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৭১ দশমিক ৯২ শতাংশই কোটি টাকা ঋণগ্রহীতাদের। অর্থাৎ, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের পাঁচ বছরে কোটিপতি ঋণগ্রহীতারা ঋণ নিয়েছেন ৩ লাখ ৪১ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা, যা আগের পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

কোটিপতি আমানতকারীর চেয়ে কোটিপতি ঋণগ্রহীতা বেশি

২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন। এসব আমানতকারীর আমানতের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। একইসময়ে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন। এসব ঋণগ্রহীতার ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোটিপতি আমানতকারীদের তুলনায় কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল যেমন বেশি, তেমনি আমানতের টাকার তুলনায় প্রদত্ত ঋণের পরিমাণও ছিল বেশি। এই প্রবণতা পরবর্তী সময়ে আরও বেড়েছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৫৬৩ জনে। তাদের আমানতের পরিমাণ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। এই সময়ে দেশে কোটিপতি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৯১ হাজার ১৭৫ জন, আর তাদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এই সময়েও কোটিপতি আমানতকারীর তুলনায় কোটি টাকা ঋণ নেওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ছিল বেশি এবং আমানতের তুলনায় ঋণের পরিমাণও অনেক বেশি।

দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ

২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা থাকলেও বছরের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা কমেছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

ঋণগ্রহীতা কোটিপতির সংখ্যা খেলাপি ঋণ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর