কৃষকের ক্ষতি কাটাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির দাবি
২৮ মে ২০১৯ ১৬:২৩
ঢাকা: কৃষকের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী বাজেটে কৃষি খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কৃষিখাত সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে সরকারিভাবে শস্য গুদাম ২১ লাখ টন থেকে ৬০ লাখ টনে বাড়ানোর আহ্বানও জানান তারা।
মঙ্গলবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘ধানসহ কৃষিপণ্যের মূল্য: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও অ্যাকশন এইড যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। খাাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।
বক্তারা বলেন, বর্তমান দামে দেশের কৃষক যদি ৬৫ শতাংশ ধান বিক্রি করে তাহলে কৃষকের ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হবে। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারের কাছে বিক্রি করে মিলাররা অধিক মুনাফা করছে। এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে ধান কেনায় মিলারদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া উচিৎ। আর সামগ্রিকভাবে কৃষকের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী বাজেটে কৃষি খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তূকি দেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারিভাবে শস্য গুদাম ও মজুদাগার ২১ লাখ টন থেকে ৬০ লাখ টনে উন্নিত করতে হবে। পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে কমিউনিটি ভিত্তিক শস্যভান্ডার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক ও কৃষি শ্রমিককে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে, বর্তমানে যা নেই। কৃষককে সংগঠিত করার পাশাপাশি স্থায়ী মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে। পাশাপাশি মজুদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। পাশাপাশি নীতি গ্রহণ ও মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমের মধ্যে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মধ্যে আরও সমন্বয় প্রয়োজন।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, কৃষককে রাজনীতিতে এসে তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। স্থানীয়ভাবে সমবায় গড়ে তোলা যেতে পারে। তিনি বলেন, যারা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় ধান কিনে নেয় তাদের আইন দিয়ে উৎখাত করা যাবে না। আমরা বর্তমানে ভুল অর্থনীতিতে চলছি। বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি অমান্য করে চলছি। প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চাল আমদানিতে শুল্ক বাড়ালে বা কমালেই লাভ হবে না। কারণ, আমাদের স্টোরেজ নেই। ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকার তা গৃহস্থের ঘরেই রাখতে পারে। বলতে পারে আমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তোমার কাছে রাখলাম। এই সময়ের পর তোমার কাছ থেকে কিনে নিবো। এই সময়ের জন্য কৃষককে নির্দিষ্ট অর্থ বা ঋণ দেওয়া যেতে পারে। কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সদিচ্ছার প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এই বোরোর কারণে সামনের বোরোতেও প্রভাব পড়তে পারে। তাই এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।’
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ২৫ শতাংশ ধান সরকার সংগ্রহ করে। অথচ আমাদের দেশে সংগ্রহ করা হয় মাত্র ৫ শতাংশ। ধান ও চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে চালের চেয়ে বেশি ধান সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত মিলগুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃষক যেসব মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করবে, তাদেরকে ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া উচিৎ। এই মুহূর্তে বলা যেতে পারে যেসব মিলার সরকারকে চাল দিবে তাদেরকে ৩০ মে’র মধ্যে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে হবে। তাহলেই বাজারে ধানের দাম বাড়বে।
মূল প্রবন্ধে সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, সরকারের কিছু ঘোষণা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এখনও কিছুটা ক্ষতি কাঠিয়ে ওঠা সম্ভব। এজন্য এখনই ৫০ লাখ টন শুধু ধান কেনার ঘোষনা ও তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানি বন্ধ করতে হবে। যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হচ্ছে সেগুলো আমদানির বিষয়ে কৃষক বান্ধব যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মিলার ও ব্যবসায়িদের ফাঁদ থেকে কৃষককে বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতিহারে কৃষি বিষয়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা, একশন এইডের পরিচালক আসগর আলী সাবরি, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলীসহ আরও অনেকেই।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম