হাজার টাকার পোশাক যেখানে বিক্রি হয় ৫ টাকায়
২৮ মে ২০১৯ ২১:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নতুন পোশাক ছাড়া কী ঈদ হয়? দেশজুড়ে তাই পোশাকের বাজার এখন জমজমাট। অভিজাত, ছোট-বড় বিপণী বিতানগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু চোখ ধাঁধানো আলোর শপিংমলগুলোতে নেই যাদের প্রবেশাধিকার, যাদের জীবন কাটে ফুটপাত আর সড়কে, তারা কি নতুন পোশাক পরে ঈদের আনন্দে মেতে উঠবে না? তাদের কথা আর কে ভাবে! না, তাদের কথা ভাবারও নিশ্চয় কেউ না কেউ আছে।
দিনকয়েক আগেই ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের ৩০টি স্পটে শপিংমল থেকে কেনা হাজার টাকার পোশাকগুলো পথশিশুদের কাছে মাত্র এক থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি করেছে একদল স্বপ্নবাজ তরুণ-যুবক। যারা এই সমাজের বৈষম্যের আগল ভাঙতে চায়। পথশিশুদের জন্য পোশাক বিক্রির এই স্টলের তারা নাম দিয়েছে ‘স্বপ্নের দোকান’।
গত ২৫ মে দিনভর চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি এবং চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ‘স্বপ্নের দোকান’ পথশিশুদের জন্য তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা তরুণ-যুবক, ভেটেরিনারি চিকিৎসক এই আয়োজনে সামিল হয়েছিলেন। যাদের অধিকাংশই ‘আরএফপিসি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য।
সংগঠনটির উদ্যোক্তা বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা নাভিদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের সামনে প্রায় ৬৫০ জন এবং সিআরবিতে ৪০০ জনেরও বেশি পথশিশু আমাদের কাছ থেকে পোশাক কিনেছে। আমরা শুধু বিভিন্ন বয়সী শিশুর শার্ট-প্যান্ট এবং জামা বিক্রি করেছি। পোশাকের দাম এক টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা পর্যন্ত। আমরা বিভিন্ন মার্কেট থেকে ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে এসব পোশাক কিনেছি।’
সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ সম্পন্ন করা তৃষা ভট্টাচার্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের কাছে আমরা পোশাক বিক্রি করেছি তারা কেউই কখনো ভালোমানের দামি একটি পোশাক গায়ে দিতে পারে না। আমরা চেয়েছি শপিংমলের একই পোশাক যেন তাদেরও গায়ে থাকে। আবার তারা যেন সেটাকে দানের কাপড় না ভাবে, সেজন্য আমরা পোশাকের দামও নিয়েছি। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য ঈদ যেন একই আনন্দ নিয়ে আসে, সেজন্য আমরা আমাদের ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছি।’
জানা যায়, ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাঈম অঙ্কন ‘স্বপ্নের দোকান’ চালু করে ঢাকায় পথশিশুদের কাছে পোশাক বিক্রি করেন। ২০১৮ সালে নাভিদের মাধ্যমে ‘আরএফপিসি’ এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়। ওই বছর চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে একটি স্পটে পথশিশুদের জন্য কিছু পোশাক বিক্রি হয়েছিল। এবার সারাদেশে ৩০টি স্পটে পথশিশুদের জন্য পোশাক বিক্রি হয়েছে।
এবার সেন্টার ডেভেলপমেন্ট ফর পিস (সিডিপি) নামে একটি সংগঠন তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে। গতবছর তারা নিজেদের পকেটের টাকায় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে স্বপ্নের দোকানের কার্যক্রম চালিয়েছিল।
সারাবাংলা/আরডি/এমও