জমজমাট ইসলামপুর-নবাবপুরে, চাহিদার শীর্ষে ভারতীয় শাড়ি
২৯ মে ২০১৯ ০৮:১৯
ঢাকা: মুঘল আমল থেকেই মসলা ও মসলিন কাপড় ব্যবসায়ীদের জন্য তীর্থস্থান ছিল বুড়িগঙ্গা লাগোয়া ঢাকার নবাবপুর ও ইসলামপুর এলাকা। সময়ের সঙ্গে মসলার ব্যবসা সরে গেলেও কাপড় ব্যবসা এখনো আগের মতোই টিকে আছে এলাকা দু’টিতে। এখানকার বাহারি কারুকাজের শাড়ি ও অন্যান্য কাপড়ের বেশ সুনাম রয়েছে সারাদেশে।
ঈদ উপলক্ষে ইসলামপুর ও নবাবপুরের কাপড়ের দোকানগুলোতে নারী ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। শিল্প মানসম্মত নকশা, বাহারি কারুকাজ ও অভিজাত রঙের কারণেই এই এলাকা দু’টো থেকে শাড়ি কিনছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
মুমতাজ শাড়ি বিতানের কর্ণধার শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে একেবারে আটপৌরে শাড়ি থেকে শুরু করে অভিজাত শাড়িও আছে। যারা এখানে শাড়ি কিনতে আসছেন, তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে না। ঢাকার যেকোনো বাজারের তুলনায় এখানে দাম কম।’
ইসলামপুর ও নবাবপুরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জামদানি, কাতান ও জর্জেটের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এবারের ঈদ জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমে পড়ায় হালকা পাড়ের শাড়িগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আধুনিকতার সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি শাড়িতে তুলে ধরা হয়েছে দেশীয় সংস্কৃতির ছাপও।
এসব শাড়ির মধ্যে রয়েছে স্বর্ণকাতান, বেনারসি জর্জেট, গাদওয়াল, কাঞ্জিভরম, অপেরা কাতান, তসর কাতান, ধুপিয়ান, বালুচুরি তাঁত, মসলিন কাতান, ঢাকাই জামদানি, স্বর্ণ কাতান, চুন্দ্রি কাতান, ফুলকলি কাতান, মসলিন জামদানি ও চেন্নাই কাতানসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ি।
তবে ঈদে পরার জন্য ক্রেতাদের মধ্যে ভারতীয় শাড়ির চাহিদা এবার অনেক বেশি। ভারতীয় কাতানের মধ্যে আলাপ, কাঁঠাল, পঞ্চম কলি, কাঞ্জিভরম, অপেরা, খাদি বিক্রি হচ্ছে বেশি। এছাড়াও শিফন ও জর্জেটের বিক্রিও এবার অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
কাপড় ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ঈদ উপলক্ষে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার শাড়ি আমদানি করা হয়। আমাদের দেশে ভারতীয় শাড়ির বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। ফলে ভারত থেকে বেশি শাড়ি আমদানি করা হয়েছে এ বছর। তাছাড়া সব শ্রেণির ক্রেতাদের মধ্যে ভারতীয় শাড়ি নিয়ে আগ্রহ থাকায় এগুলো বিক্রিও হচ্ছে বেশি।
নবাবপুর ও ইসলামপুরে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে শাড়ি। সুতি ও সিল্কের শাড়িগুলোতে এমন দাম পড়লেও জামদানি কিনতে গেলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। ২০ হাজারে মিলছে শিফন ও মসলিন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ দু’টি শাড়ির জন্য ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনেছেন অনেক ক্রেতা।
মসলিন ও জামদানি শাড়িতে বির্টস, দপকা, জরি কম্বিনেশনে বাহারি রকমের সব হাতের কাজ দেখা গেছে। সুতার কাজ, কারচুপি, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্টসহ বিভিন্ন নকশাও রয়েছে এসব শাড়িতে।
রাইকিশোরী শাড়ি ঘরের বিক্রেতা সত্যানন্দ রায় বলেন, ‘যেকোনো উৎসবে নকশা করা শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে বেশি। অন্যকে দেখাতেই উৎসবের কাপড় কেনা হয়, এইজন্য শাড়িটাও হওয়া চাই গর্জিয়াস। আমাদের এখান থেকে যে শাড়িগুলো বিক্রি হচ্ছে তার সবই নকশা করা ও বিভিন্ন সুতার কাজ করা। দামও অনেক কম। তবে এখন আর ক্রেতারা দাম নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করেন না। সৌন্দর্য অগ্রাধিকার পায়।’
সত্যানন্দ জানান, এবছর গরম ও বৃষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে শাড়িগুলোর নকশা করা হয়েছে। এজন্য হালকা কাপড়ের সঙ্গে হালকা রঙের শাড়িগুলোই বিক্রি হচ্ছে বেশি। সত্যানন্দের মতে, হালকা গোলাপি, গোলাপি, সবুজ ও টিয়া রঙের শাড়ি বেশি বিক্রি হয়েছে তার দোকানে।
এ বছর এখন পর্যন্ত রাইকি শোরী শাড়ি ঘরে সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৭ হাজার টাকা মূল্যের শাড়ি বিক্রি হয়েছে বলে জানান সত্যানন্দ।
এদিকে, ভারতীয় শাড়ি তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় দেশীয় শাড়ির বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিক্রেতা। এই নিয়ে তারা ক্ষোভও জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল, রাজশাহীর শাড়ি উৎপাদনকারীরা শ্রমের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না জানিয়ে গুরুদয়াল দাস বলেন, আমরা যারা দেশীয় শাড়ি বিক্রি করি, এ বছর তাদের ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কারণ দেশীয় শাড়ি বিদেশি নিম্নমানের শাড়ির তুলনায় কিছুটা দামি। এমন চলতে থাকলে ধীরে ধীরে সবাই বিদেশি শাড়ির ব্যবসা শুরু করবে। এতে করে মার খাবে এ দেশীয় তাঁতিরা। দেশের এই শাড়ি শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এখনই এ দিকে নজর দিতে হবে।
নবাবপুর ও ইসলামপুর কাপড়ের বাজার গোলকধাঁধার মতো বিশাল। এখানে এলে যেকোনো বয়সী ক্রেতাই হারিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে। তবে এখানে হারিয়ে যাওয়াটা কোনো মানুষকে সন্ত্রস্ত করে তুলবে না, বরং বাহারি নকশা ও নানান রঙের কারুকাজের শাড়ি দেখতে দেখতেই সময় কেটে যাবে।
সারাবাংলা/টিএস/এমআই