Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যানজট আর গরম ভোগাচ্ছে রাজধানীবাসীকে


২৯ মে ২০১৯ ১৩:৩২

ঢাকা: চলতি বছর রমজান মাসে মাত্রা ছাড়িয়েছে রাজধানীর যানজট। মাত্র দশ মিনিটের পথও পাড়ি দিতে হচ্ছে এক ঘন্টায়।

ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, একযোগে চলমান বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে সরু হয়ে যাওয়া রাস্তা, যানবাহনের আধিক্য ও আগে পৌঁছানোর তাড়াই এই অসহনীয় যানজটের কারণ। এছাড়া সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ঈদের কেনাকাটা করতে বাজারমুখী মানুষের আধিক্য।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর আগারগাঁও সিগনালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক সৌরভ বলেন, ঈদের জন্য মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। প্রচুর মানুষ ঢাকা শহর ছেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। রাস্তাও কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এসব কারণেই যানজট বেড়েছে।

ফার্মগেটে কথা হয় আরেক পুলিশ পরিদর্শক সাহেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আরো কয়েকদিন গাড়ির এই চাপ থাকবে। ঈদের কাছাকাছি সময়ে আবার ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যাবে। তবে ঈদের আগে এবার চাপটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। সব মানুষ এক সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে গেলে চাপ বাড়বেই।’

অন্যদিকে এবছর প্রচণ্ড গরম পড়েছে। যানজটে নাকাল নগরবাসীর ভোগান্তিও তাই বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকায় যানজটে বসে বা হেঁটে যেভাবেই গন্তব্যে যেতে চান না কেন ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন সবাই।

যানজটের কবল থেকে ছাড় পাচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই বহিরাগত মাইক্রোবাস, বাস ও ট্রাকের চাপায় স্থবির হয়ে থাকে এই ক্যাম্পাস। নীলক্ষেত, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষা ভবন ও চানখারপুলের দিকের রাস্তায় গাড়ির আধিক্য ও হর্নে শিক্ষার্থীদের কান পাতা দায় হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

 

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের গাড়ির অবাধ চলাচলের ফলে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। নিজেদের ক্যাম্পাসের রাস্তায় জ্যামে আটকে গেলে অসহায় লাগে।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিমুল বলেন, পাঁচ বছরে ক্যাম্পাস জীবনে এমন বিশৃংখল পরিস্থিতি দেখিনি। এখন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে বের হতে ভয় হয়। অনেক বেপরোয়া গতিতে গাড়িগুলো ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে চলাচল করে, দুপুরের পর থেকে শুরু হয় যানজট।

যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাস-ট্রাকের চালকরাও। আগে যেখানে সারাদিনে চারটি ট্রিপ দেওয়া যেত এখন সেখানে একটি, খুব বেশি হলে দুটি ট্রিপ দিতে পারেন তারা। এই কারণে রোজকার ভাড়ার টাকাও ঠিকমতো তুলতে পারেন না বলে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বাস চালক।

বিহঙ্গ বাসের ড্রাইভার মাজেদ বলেন, আগে ১০-১২ মিনিটে সিগন্যাল ছাড়া হতো, এখন সেটি আধা ঘণ্টায়ও ছাড়া হয় না। এত মানুষ, এত গাড়ি! মিরপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সারাদিনে এখন একটা ট্রিপও পূর্ণ করা যায় না। আমরা যে টাকায় গাড়ি ভাড়া করি, সে টাকাটিও আমাদের পকেটে আসে না। এ যানজট আমাদের জন্য অনেক বড় যন্ত্রণা।

তবে ঈদের কেনাকাটাকেই যানজটের সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। গত এক সপ্তাহে নীলক্ষেত থেকে মিরপুর পর্যন্ত যে অসহনীয় যানজট লক্ষ্য করা গেছে, তার কারণ হিসেবে ফুটপাতে ব্যবসা ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংকে দুষছেন সাধারণ মানুষ।

শামীম পারভেজ নামের এক পথচারী বলেন, নীলক্ষেত থেকে মিরপুরের দিকের এই রাস্তাটি কিন্তু অনেক প্রশস্ত। কিন্তু যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করার কারণে এবং ফুটপাতে ব্যবসা করার কারণে রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর দায় মেটাচ্ছেন সাধারণ নগরবাসী, কারণ সারাদিন জ্যামে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। এ সমস্যার সমাধান দরকার।

ঈদ যতই এগিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে বাটা সিগনাল, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, গ্লোব সেন্টার, হকার্স মার্কেটে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়। যে কারণে এই মার্কেটগুলোর আশপাশের সড়কে যানজট দেখা দিচ্ছে।

এছাড়া পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি, মালিবাগ, মৌচাক, বনানী, গুলশান, ফার্মগেট, উত্তরাসহ ঢাকার প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায় অসহনীয় যানজটের খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিকেলে গুগলের ট্রাফিক ট্র্যাকিং সাইটে গোটা ঢাকা শহরকে যানজটের কবলে লাল রঙ করে দেখানো হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মোজাম্মেল বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ মার্কেটে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নেই। যেগুলোতে আছে সেখানেও জায়গা অনেক কম। ফলে ফুটপাথে গাড়ি রাখছেন সবাই, তৈরি হচ্ছে যানজট। লোকজনের সচেতনতার অভাবে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এসব মার্কেটের সামনে সারাদিন সারি সারি গাড়ি ও রিক্সা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সারাবাংলা/টিএস/এসএমএন

ঈদের কেনাকাটা উন্নয়ন কাজ যানজট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর