Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে প্রস্তুত নয় এনবিআর, ব্যবসায়ী


৩০ মে ২০১৯ ০৯:৫৯

ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। বাস্তবে এ কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এ বাস্তবতায় আগামী ১৩ জুন বাজেট পেশের আগে পুরো প্রক্রিয়াকে অনলাইনে আনাও সম্ভব নয়। একদিকে যেমন এনবিআর কর্মকর্তারা এসব তথ্য দিয়েছেন একইভাবে ব্যবসায়ীরাও বলছেন, বাস্তবায়ন নিয়ে তাদেরকে পরিস্কার ধারণা দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ব্যবসায়ীদের তীব্র বিরোধীতার মুখে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে সরকার।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে এনবিআর পুরোপুরি প্রস্তুত কিনা এই প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে সবকিছু অনলাইনে হবে। আমাদের অনলাইনের কাজ চলছে। তবে, পুরোপুরি শেষ হয়নি। কিছু কাজ হয়তো এখনো বাকি আছে। তবে, অনলাইনের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি সিস্টেমও থাকবে। যারা অনলাইনে দেবে না তারা ম্যানুয়ালিও নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে পারবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে আইনের আওতায় ভ্যাট নিবন্ধন, মূসক দাখিলপত্র, রিফান্ড, অডিট, বকেয়া ব্যবস্থাপনা, তদন্ত ও অনুসন্ধান, আপিল, রাজস্ব হিসাব ব্যবস্থাপনা, করদাতা হিসাব ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব তথ্য ব্যবস্থাপনা সবই অনলাইন সিস্টেমে হওয়ার কথা। কিন্তু ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া আর কোনো কিছুই অনলাইনে করা যায় না এখন পর্যন্ত।

তবে, অনলাইনে নিবন্ধন করা গেলেও তাতে ব্যাপক গলদ থেকে যাচ্ছে। কেননা অনলাইনে ভুল তথ্য দিয়ে নিবন্ধন নেওয়ার পরে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানকেই আর খুঁজে পায় না এনবিআর। একই সঙ্গে নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানটি কমার্শিয়াল নাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেটিও বুঝতে পারে না কাস্টমস। ফলে, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অনলাইনে ভ্যাট ফাঁকি রোধে প্রায় ১ লাখ প্রতিষ্ঠানে ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) বসানোর পরিকল্পনা নেয় এনবিআর। ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস এনবিআরের সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো ভ্যাটের হিসাব সরাসরি এনবিআরে চলে যাবে। ইএফডি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যবসায়ীদের ইএফডি দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো দরপত্রের কাজই শেষ করতে পারেনি এনবিআর। ফলে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও পুরোপুরি সিস্টেমে প্রস্তুত নয় এনবিআর।

এদিকে, চলতি এপ্রিল মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এনবিআরে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ অটোমেশন কাজ শেষ না করে আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এটি কার্যকরের আগেই ভ্যাট ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অনলাইন করা দরকার।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যাট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে দেশের ভ্যাট বিভাগের কমিশনারেটদের এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়নি এনবিআর। ফলে, সংসদে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হওয়ার পর কর্মকর্তারা কিভাবে এটি আদায় করবে বা কিভাবে কাজ করবে সেটাও তারা জানেন না। ফলে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হওয়ার পরে ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

শুধু তাই নয়, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে এনবিআর কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে তদারকির ক্ষেত্রে আর সরাসরি অভিযান চালাতে পারবে না। অডিটের ওপর নির্ভর করেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া, অনলাইন সিস্টেমের আওতায় সকল ভ্যাট চালান অনলাইনে এনবিআরের সার্ভারে যুক্ত থাকবে। এতে ভ্যাট ফাঁকির ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কারণ, তদারকি কম থাকবে আর নিরীক্ষা বেশি হবে। এছাড়া, নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাট ব্যবস্থাপনার অধিকাংশ কাজ চলে যাবে কমিশনারেটের সদর দফতরে। ফলে, কমিশনারেটগুলোতে কাজ বাড়লেও জনবলের সংখ্যা কম থাকায় রাজস্ব আহরণে প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) চেয়ারম্যান গোলাম মঈনউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, সিগারেটে আমাদের কিছু দাবি ছিলো এনবিআরের কাছে। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হয়নি। সিগারেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের হারই রাখা হয়েছে। এছাড়া, ভ্যাটের বিভিন্ন হার হচ্ছে। এখন কিভাবে আমরা ভ্যাট দেব সেটা জানি না কিংবা এনবিআর এসব বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো আলোচনাও করেনি। সুতরাং এক্ষেত্রে রাজস্ব দিতে সমস্যা তৈরি হবে।

এ বিষয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, এনবিআরের কাছে আমাদের যেসব দাবি ছিলো সেগুলোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বা বাস্তবায়নের আগে আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তাই, বাস্তবায়নের পরে আমরা কি করব সেটা জানি না। তাই, কোন পণ্যে কিভাবে ভ্যাট দেব বা কিভাবে ভ্যাট আদায় করা হবে সে বিষয়েও আমরা কিছুই জানি না। তবে, নতুন ভ্যাট আইনকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এখন কিভাবে সেটা বাস্তবায়ন হবে সেটা এনবিআর জানে।

এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় অনেকগুলো অসঙ্গতি ছিলো সেগুলো নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন নতুন ভ্যাট আইনে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া, ভ্যাটের বিভিন্ন হার হচ্ছে এটাই আমাদের প্রধান দাবি ছিলো। সেটি মানা হয়েছে। তবে এনবিআর কিভাবে ভ্যাট আদায় করবে সে বিষয়ে কিছুই জানি না। তাদের কতটুকু প্রস্তুতি আছে সেটাও আমরা জানি না। নতুন আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কিভাবে ভ্যাট দেবে সেটাও জানি না। সুতরাং ব্যবসায়ী এবং এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন আইন বাস্তবায়নের পরে একটা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কেননা নতুন আইনে সবকিছু অনলাইনে হওয়ার কথা। এনবিআরের টেকনোলজির অভাব রয়েছে। ব্যবসায়ীদের নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দরকার সেটাও পর্যাপ্ত হয়নি। সুতরাং রাজস্ব আহরণে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হবে।

সারাবাংলা/এসজে/জেএএম

ভ্যাট আইন মূল্য সংযোজন কর মূসক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর