ফেনীর ৩ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন
৩০ মে ২০১৯ ১৬:৫২
ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফেনীর তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির প্রধান সমন্বয়ক মো. হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হকসহ তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
এটি তদন্ত সংস্থার ৭০তম প্রতিবেদন উল্লেখ করে তদন্ত সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করা হবে।
এছাড়া তিন আসামির পরিচয়ে বলা হয়েছে, ফেনী সদরের মজলিশপুরের আশ্রাফ আলীর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তজু (৬৭)। যিনি বেসরকারি ব্যাংক এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন। অপর আসামি মো. আবু ইউসুফ (৭১) বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নুর মোহাম্মদ (৭৩), পিতা সেকান্দার সুফী। তাদের মধ্যে তোফাজ্জল ও ইউসুফ পলাতক। নুর মোহাম্মদকে গত ২০ মে বর্তমান ঠিকানা নীলফামারী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘তোফাজ্জল ১৯৭১ সালের পূর্বে জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ছাত্রসংঘের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া তিনি শিল্পপতি ও এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালকও ছিলেন।’
‘আবু ইউসুফ ও নুর মোহাম্মদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের কর্মী হিসেবে ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। তবে বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’
‘২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ফেনী সদর থানার ফকির হাট বাজার এলাকায় আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ করে তারা।’—বলেন তিনি।
আসামীদের বিরুদ্ধে মোট দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ দুটিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল রাজাকার তোফাজ্জলসহ সাত থেকে আট জন সশস্ত্র রাজাকার ফেনী সদরের ফকিরহাট বাজারে আবুল হোসেনের দোকানে আক্রমণ করে। তোফাজ্জল তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে উত্তর ধলিয়ার গোলাম রাব্বানীকে গুলি করে আহত করে ও আবুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে। আসামিরা ফকিরহাট বাজারে ১০ থেকে ১৫টি দোকান লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে। তারপর তোফাজ্জল আবুল হোসেনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার দোকানের জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট রাত ১০টার দিকে রাজাকার আবু ইউসুফসহ পাছ থেকে ছয় জন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর গোবিন্দপুরের আব্দুর রউপ মেম্বারের বাড়িঘর লুটপাট করে। রাজাকার তোফাজ্জল, ইউসুফ, নুর মোহাম্মদসহ অন্য রাজাকাররা উত্তর গোবিন্দপুরের নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক শামছুল হক, আব্দুল হক, মুজিবুল হক (বর্তমানে মৃত) ও আব্দুর রউপকে (বর্তমানে মৃত) নিজ নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতন করে।
একইদিন রাত একটার দিকে রাজাকার তোফাজ্জল, রাজাকার আবু ইউসুফ, রাজাকার নুর মোহাম্মদসহ চার-পাঁচ জন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর গোবিন্দপুরের আব্দুল ওহাবকে আটক করে। পরে রাজাকার তোফাজ্জলের নির্দেশে রাজাকার ইউসুফ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া আটককৃতদের কালিদহ বড়দাহ প্রসন্ন রায় জমিদার বাড়ি রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আটক রেখে তাদের অমানুষিক নির্যাতন করে।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই
তদন্ত সম্পন্ন তিন রাজাকার ফেনীর তিন রাজাকার মানবতাবিরোধী অপরাধ যুদ্ধাপরাধী