সাধ ও সাধ্যের কেনাকাটায় ভরসা নিউ মার্কেট
১ জুন ২০১৯ ০১:০০
ঢাকা: ঈদ যত এগিয়ে আসছে, বাড়ছে কেনাকাটার পরিমান। পরিবার-প্রিয়জনদের জন্য কিছু একটা কিনতে হবে, সেই ইচ্ছা থেকে বিপণি বিতানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। যাদের অভিজাত বিপণি বিতানে যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তারা ঈদ উপহার কিনছেন ফুটপাত থেকে। অনেকে আবার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও অল্প দামে পণ্য কিনতে ভিড় করছেন রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে।
নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাতের একটি দোকানে কথা হয় রিকশা চালক আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি জানান, সারামাস রিকশা চালিয়ে দুই হাজার টাকা আলাদা করে জমিয়েছেন। নিউ মার্কেটের ভেতরের দোকান থেকে কেনার সাহস পাচ্ছেন না, তাই ফুটপাতেই সেরেছেন কেনাকাটা। বৃদ্ধ মা ও তার স্ত্রীর জন্য দুটি শাড়ি, নিজের জন্য শার্ট-লুঙ্গি আর পাঁচ বছরের কন্যার জন্য কিনেছেন দুটি জামা। সুযোগ হলে রাতেই রওনা দেবেন রংপুরের উদ্দেশে।
মান্নান বলেন, ‘রোজার মাসে প্রচণ্ড গরমে দিনের বেলা রিকশা চালানো খুব কঠিন। তাই পুরো মাস রাতেই রিকশা চালিয়ে টাকা জমিয়েছি। কাপড় কেনার সময় নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। কাপড়গুলো পরে যখন মা, বউ এবং কন্যা ঈদ করবে তখন আমার খুব আনন্দ হবে। টাকা হলে পরের বার ওদের জন্য আরও ভালো কিছু কিনে নিয়ে যাবো। দোয়া করবেন।’
মান্নানের জন্য দোয়া করার আগেই আলাপ শুরু হয় জামিলের সঙ্গে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী, টিউশনির বেতন পেয়েছেন গতকাল। বেতনের পুরো ৫ হাজার টাকা দিয়েই গাউছিয়া, চাঁদনী চক ও চন্দ্রিমা মার্কেট ঘুরে ঈদের কেনাকাটা সেরেছেন।
মা-বাবার জন্য শাড়ি ও পাঞ্জাবির পাশাপাশি প্রিয় স্কুল শিক্ষকের জন্যও একটি পাঞ্জাবি কিনেছেন জামিল। নিজের জন্য কিনেছেন প্যান্ট ও টি-শার্ট।
জামিল বলেন, বাবা মার জন্য সবসময়ই কিছু না কিছু কিনি। এবার আমার প্রিয় স্কুল শিক্ষকের জন্যও কিনেছি। নেত্রকোনার হাওরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এই যে আমি ঢাকায় এসেছি তার ভিত্তি করে দিয়েছিলেন আমার শিক্ষক। উনার প্রতি কখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়নি, এজন্যই পাঞ্জাবি কিনেছি।
আবেগ ও অনুভূতির এই কেনাকাটা এবার শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। তবে ঈদ যত এগিয়ে আসছে কেনাকাটায় ভিড় ততই বাড়ছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অভিজাত বিপণি বিতানগুলোতে তিল ধারণের জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা ও চাঁদনী চকের দোকানগুলোতে পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, শাড়ি, থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, থান কাপড়, জুয়েলারি, ব্যাগ, জুতা, শিশুদের খেলনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন পণ্যসহ নিত্যব্যবহার্য সব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ বাজারগুলোর প্রতিটি দোকানেই পণ্যের দাম তুলনামূলক কম।
চাঁদনী চকের শাড়ি ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছি না। শাড়ির দোকানগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম বয়সি নারীদের ভিড় এবার বেশি। দাম কম হওয়ায় বিক্রিও হচ্ছে বেশ। তবে গরমের কারণে সকালের দিকে ও সন্ধ্যার পর ক্রেতা সমাগম একটু বেশি হচ্ছে।
নিউ মার্কেট এলাকার দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘এবার শার্ট, জিন্স প্যান্ট, জর্জেটের ওপর কাজ করা থ্রি-পিস, ভারতীয় বুটিকস আইটেমের থ্রি-পিস, লন, ভয়েল, শার্টিনের থ্রি-পিস, প্রিন্টের থ্রি-পিস, ব্লক ও বাটিকের বিভিন্ন ডিজাইন করা থ্রি-পিস বেশি বিক্রি হচ্ছে। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার, গয়না, ব্যাগ, জুতা এবং বিভিন্ন প্রসাধনীও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।
এসব দোকানে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, জিনস প্যান্ট ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, টি-শার্ট ২৫০ থেকে ৪০০, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ থেকে ১২০০, শাড়ি ৪৫০ থেকে ১০০০, শিশুদের থ্রি-কোয়ার্টার জিনস প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০, শাড়ি ৫০০ থেকে ১৫০০ এবং ছেলে-মেয়ে ও শিশুদের কাপড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
সারাবাংলা/টিএস/এমআই