রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারতের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: মোদি
১ জুন ২০১৯ ০৪:০০
নয়াদিল্লী: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে দিল্লীর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার (৩১ মে) বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ হায়দরাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে মোদি বলেন, ‘আমরা মনে করি জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত। কাজেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।’
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের একার নয়। এটা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য মারাত্মক হুমকি।
দীর্ঘস্থায়ী ও দ্বিপক্ষীয় ঐতিহাসিক এবং ভ্রাতৃপ্রতীম দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মোদি বলেন, ভারত এবং এ দেশের জনগণ সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উদযাপন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বহুপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
বৈঠকে রাষ্ট্রপতি হামিদ মোদিকে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় আছে।
ভারতও অমীমাংসিত বিষয়টির সমাধান চায় উল্লেখ করে মোদি যৌথ নদী কমিশনের কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অংশিদারিত্ব বিকশিত হয়েছে।
বিপুল বিজয়ের মধ্যদিয়ে টানা দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বললেন, ‘ভারতের জনগণ আবারও আপনার নেতৃত্বে আস্থা স্থাপন করেছে এবং আমি নিশ্চিত যে আপনি দ্বিতীয় মেয়াদেও দায়িত্ব পালনে বড় ধরনের সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবেন।’
রাষ্ট্রপতি মোদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার জন্য তিনি (হাসিনা) মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তবে তিনি (হাসিনা) সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে আপনাকে (মোদি) বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় রয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো, সংস্কৃতি, জনগণ-জনগণ যোগাযোগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক অর্থনীতি, নৌ-সহযোগিতা ও পারমাণবিক জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধুত্বপূর্ণভাবে ছিটমহল ও জলসীমা ইস্যু নিষ্পত্তির মাধ্যমে সৎ প্রতিবেশিসুলভ আচরণে সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শন করেছে এবং কোন সন্ত্রাসী ব্যক্তি, গ্রুপ বা সংগঠনকে কোন ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজ ভূখন্ড ব্যবহার করতে দেয় না।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সংহত এবং দুই দেশের মধ্যে সকল অনিষ্পন্ন ইস্যু নিষ্পত্তি করার অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি হামিদকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে সকল অনিষ্পত্তিকৃত বিষয় সমাধান করতে এক যোগে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।
মোদি এখানে হায়দারাবাদ হাউজে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি হামিদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি গত সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বুধবার তিন দিনের সফরে নয়াদিল্লী পৌঁছেন। সূত্র: বাসস।
সারাবাংলা/এমআই