Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে এইডস


১ জুন ২০১৯ ২৩:০৮

ঢাকা: প্রতিমাসে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় জন রোহিঙ্গাকে পাওয়া যাচ্ছে এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার নারী-পুরুষ-শিশু এইডসে আক্রান্ত। যদিও শুরুতে এর সংখ্যা ছিল ২৮৫ জন। দিন দিন এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছেন স্থানীয়রাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরাসরি কাউকে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয় না। কারণ এইডস পরীক্ষার সঙ্গে ‘মান-সম্মান’ এর বিষয় জড়িত। মূলত অন্য রোগের পরীক্ষা করাতে গিয়ে ‘অ্যাকসিডেন্টালি’ এটা আবিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু উদ্যোগী হয়ে পরীক্ষা করানোর সুযোগ খুব কম। আর তারা ‘হোস্ট কমিউনিটি’ নয় বলে সেখানে সরকারের অনেক নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে না। যারা কারণে এইচআইভি পজিটিভ যারা রয়েছে, তারা চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারে এইডস নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নোঙ্গর’। নোঙ্গরের পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গেছে প্রায় ৫০০ জনের মতো। তবে ধারণা করা হচ্ছে এখানে প্রায় আড়াই হাজারের মতো এইচআইভি পজিটিভ রয়েছেন।’

আরও পড়ুন- ‘শক্তি বাড়াতেই’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরে ঘরে একাধিক শিশু

দিদারুল আলম রাশেদ আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে কেবল কক্সবাজার নয়, পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এদের যদি এখনও চিকিৎসা আওতায় আনা না যায় তাহলে আমাদের জন্য সেটি বেশ ঝুঁকির হবে। আর এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।’

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. এম এ মতিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এইচআইভি পজিটিভ কতজন রয়েছে, এ নিয়ে আমাদের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে প্রায় আড়াই হাজারের মতো রোহিঙ্গা এইডসে আক্রান্ত।’

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের এ অসুখের কারণে নিশ্চিতভাবেই ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারের স্থানীয়রা মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্নভাবেই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে গেছে, ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে স্থানীয়দের মধ্যেও এইডস ঝুঁকি বাড়ছে। আর ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী থেকে ১৪ জন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী থেকে ১৬ জন মারা গেছে এইডস আক্রান্ত হয়ে।’

কোন প্রক্রিয়ায় এইচআইভি পরীক্ষা করা হয় জানতে চাইলে ডা. এম এ মতিন বলেন, ‘এখানে সরাসরি কাউকে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয় না। অন্য রোগের বিভিন্ন পরীক্ষার সময় ধরা পরে বিষয়টি। তখন তাকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হচ্ছে। কিন্তু উদ্যোগী হয়ে পরীক্ষা করানোর সুযোগ আমাদের খুব কম।’

তবে যারা ইতোমধ্যেই শনাক্ত হয়েছে এইডসের চিকিৎসা প্রটোকল অনুযায়ী তাদেরকে কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতাল এবং উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেই তাদের চিকিৎসা চলছে বলেও জানান তিনি।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এই এইচআইভি পজিটিভ যদি সঠিকভাবে শনাক্ত করে প্রতিরোধ না করা গেলে সেটি দেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কিনা প্রশ্নে ডা. এম এ মতিন বলেন, “যদি হোস্ট কমিউনিটি হতো তাহলে হয়তো একরকম কথা হতো কিন্তু যেহেতু এখানে অনেক আইনগত বিষয় জড়িত রয়েছে। আর তারা একটি ‘আনরেস্ট সোসাইটির আনরেস্ট এলাকা’ সেখানে সরকারের অনেক বিধিবধ্য নিয়মকানুন প্রযোজ্য হচ্ছে না। যার কারণে সঠিকভাবে সঠিক নাম্বার স্ক্রিনআউট হচ্ছে না।” তারপরও বর্তমানে কাউন্সিলিং করানো হচ্ছে, স্বাস্থ্য সেবার অধীনে আনা হচ্ছে, যদিও সেটা শক্তভাবে চলছে না বলে জানান ডা. এম এ মতিন।

চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, “প্রতিমাসে রোহিঙ্গাদের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়জন এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে, যা কিনা আতঙ্কজনক। এগুলো নিয়েও হুমকি রয়েছে এবং ‘কন্ট্রামিনেশন’ হতে পারে। আর এসব কারণে স্থানীয়রা ঝুঁকিতে রয়েছে, দ্যাটস ফর শিউর। আই ক্যান স্ট্যান্ড ফর ইট।’”

ডা. হাসান শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে নিশ্চিতভাবেই স্থানীয়রা ঝুঁকিতে রয়েছে এবং কিছু কিছু লিকেজ তো হচ্ছেই। হাসপাতালগুলোতেও আমরা ঠিকমতো তাদের রাখতে পারছি না, সেখান থেকেও এইডস ছড়িয়ে পরার ঝুঁকি রয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ওয়ার্ড রয়েছে।’ তবে গত জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা সংস্থা চিকিৎসক দিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক সংকটের কারণে এখন তাদের আলাদা করে চিকিৎসা করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন-

রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় ওআইসিতে সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

বার্লিন সম্মেলনে জলবায়ু ও রোহিঙ্গা সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরবে ঢাকা

সারাবাাংলা/জেএ/এমও

এইচআইভি এইডস রোহিঙ্গা ক্যাম্প রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর