‘মিথ্যা কলঙ্ক’ সইতে না পেরে স্কুল ছাত্রীর আত্মহনন
২ জুন ২০১৯ ০৬:১৭
রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে সামাজিক মিথ্যাচার সইতে না পেরে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক স্কুল ছাত্রী। নিহত স্কুল ছাত্রী মুন্নি আক্তার (১৬) চন্দ্রঘোনা কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছে। সে ওই এলাকার মো. কাসেমের মেয়ে।
শনিবার সকাল ৬টায় কাপ্তাইয়ে চন্দ্রঘোনার কয়লার ডিপো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ১২ ঘন্টা পর শনিবার বিকেল চারটার পর কর্ণফুলী নদী থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। আত্মহত্যা করার আগে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি চিরকুটে আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে মুন্নি।
মুন্নির ভাই মোশাররফ হোসেন জানান, ‘মুন্নি আক্তারের সঙ্গে সম্প্রতি বন্ধুত্ব হয় চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার হাফেজ এমরান হোসেনের ছেলে মো. ফরহাদের (১৭)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই আসে ফরহাদ। মুন্নি আক্তারের বাড়ির সামনে পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বলে ফরহাদ। কিন্তু বিষয়টিকে ভিন্নখাতে ব্যবহার করে স্থানীয় এক ব্যক্তি। ডেকে আনেন স্থানীয় ইউপি সদস্যকেও। তখন এক পর্যায়ে ছেলেটিকে আটকে রাখা হয় স্থানীয় মসজিদের এক কোনায়। ততক্ষণে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় নানান মিথ্যাচার।’
মোশাররফ আরও বলেন, ‘এমন মিথ্যাচার শুনে শেষ পর্যন্ত মুন্নি আক্তার ছেলেটাকে বলে, যেহেতু এলাকার মানুষ আমার নামে এভাবে মিথ্যা বদনাম ছড়িয়েছে সেহেতু আমাকে বিয়ে করে ফেলুন। কিন্তু ছেলেটি এ কথায় রাজি হয়নি। সে বলে, তোমার সাথে আমার সবে মাত্র পরিচয়, আমি কেন তোমাকে বিয়ে করবো? অন্যদিকে ইউপি সদস্যও থানার দোহাই দিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এলাকায় রটানো হয় নানান কাহিনী। পরবর্তীতে সামাজিক এই মিথ্যাচার সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আমার বোন। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. আজিজুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও নিজে টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। আজিজুল হক জানান, ‘আমি তাদের বলেছিলাম তারা যেনো থানায় যোগাযোগ করেন।’
বাড়ির সামনে স্বাভাবিক ভাবে ছেলে-মেয়ে উভয়কে দেখার পরে কেন তাদের এভাবে হয়রানি করা হলো এমন প্রশ্নে নিরোত্তর থাকেন ইউপি সদস্য আজিজুল হক। কাপ্তাই থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল আলম জানান, ‘বৃহস্পতিবার ঘটনার সূত্রপাত হলেও আমরা জানতে পেরেছি শনিবার। স্থানীয়ভাবে আমাদের বিষয়টি কেউই জানায়নি।’
কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, ‘অবশেষে শনিবার বিকেলে মরদেহটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এই বিষয়ে পরবর্তীতে তদন্ত করলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মেয়েটি সামাজিকভাবে অপমানিত হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।’
সারাবাংলা/পিআর/টিএস