টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘অচলাবস্থার’ আশঙ্কা
৩ জুন ২০১৯ ১০:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল ফিতরের আগে-পরে মিলিয়ে টানা আটদিনের ছুটিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে জাহাজ ও কনটেইনার জটের ‘আশঙ্কা’ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই অচলাবস্থা কাটাতে শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও পরিবহন কোম্পানিগুলোকে ঈদের বন্ধেও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেছে বন্দর। তবে বন্দর ব্যবহারকারী এই সংস্থাগুলো ঈদের ছুটিতে রফতানি পণ্য জাহাজে তুলতে আগ্রহী হলেও আমদানি পণ্য খালাসে আগ্রহী নয়।
আগামী মঙ্গলবার (৪ জুন) থেকে ঈদুল ফিতরের তিনদিনের সরকারি বন্ধ শুরু হচ্ছে। তবে সরকারি সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে এই বন্ধ কার্যত শুরু হয়েছে গত শুক্রবার (৩১ মে) থেকে। শনিবারও সাপ্তাহিক ছুটি, রোববার শবে কদরের বন্ধের পর শুধু সোমবার একদিন খোলা থাকছে অফিস-আদালত। এরপর তিনদিন ঈদের বন্ধ শেষে শুক্রবার (৭ জুন) ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, সোমবার একদিন খোলা থাকলেও এদিন বন্দরে পণ্য ওঠানামা ও ডেলিভারির কাজে তেমন গতি থাকবে না। এর ফলে কার্যত টানা নয়দিনের ছুটির কবলেই পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর।
এছাড়া ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবোঝাই ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচলও রোববার (২ জুন) থেকে বন্ধ থাকছে। মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং পরিবহন সংস্থাগুলো কাজে যোগ দেবে না। সবমিলিয়ে বড়ো ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হতে পারে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর শুধু ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এরপর বন্ধের মধ্যেও সার্বক্ষণিকভাবে খোলা থাকবে। কিন্তু শিপিং এজেন্ট যদি সহযোগিতা না করে, সিএন্ডএফ এজেন্ট যদি পণ্য খালাস না করে আর কনটেইনার যদি জেটি থেকে বের না হয়, তাহলে তো একটা অচলাবস্থা তৈরি হবে। যদিও আমরা এখনো আশা করছি যে, সেই ধরনের কোনো এফেক্ট হবে না, তারপরও আমরা শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং পরিবহন কোম্পানিগুলোকে ঈদের বন্ধেও তাদের কার্যক্রম চালু রাখার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি।’
বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে একসঙ্গে ৪৯ হাজার টিইইউস কনটেইনার রাখা সম্ভব। রোববার পর্যন্ত বন্দরে প্রায় ৩৫ হাজার টিইইউস কনটেইনার আছে বলে জানিয়েছেন সচিব ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, “জাহাজ থেকে বর্তমানে যেভাবে খালাস চলছে, তাতে ঈদের সময়ও ৩৫ হাজার টিইইউস’র মতো কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে থাকবে। আমরা আরও প্রায় ১৫ হাজার টিইইউস’র মতো কনটেইনার রাখতে পারব। কিন্তু সেগুলো যদি বন্দর থেকে বের করা না যায়, তাহলে সমস্যা হবে। জাহাজকে যদি জেটিতে কনটেইনার খালাস করার জন্য ওয়েট করতে হয়, তাদের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জাহাজজটও তৈরি হতে পারে।”
সচিব জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ছয়টি জাহাজ রফতানি পণ্য নিয়ে রওনা দেয়। আর আমদানি পণ্য নিয়ে প্রবেশ করে আরও ছয়টি জাহাজ। ঈদের বন্ধে পণ্য উঠানামায় স্থবিরতা তৈরি হলে জাহাজগুলোকে জেটিতে অলস সময় কাটাতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাহাজ অলস বসে থাকলে আমাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ একদিন বসে থাকার জন্য যে পরিমাণ মাশুল আমদানিকারককে দিতে হবে, সেটা তো সরাসরি বাজারে ভোক্তার ওপরই চাপবে।’
ঈদের ছুটিতেও শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফএজেন্ট এবং পরিবহন সংস্থাগুলোর অফিস খোলা রাখার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌক্তিক বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস-সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক, শ্রম ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শিহাব চৌধুরী বিপ্লব সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন থেকে তিনদিন সিএন্ডএফ অফিস বন্ধ থাকবে। তবে রফতানি পণ্যের জাহাজ নিয়ে আমাদের কাজ স্বাভাবিক চলবে। তবে আমদানি পণ্য খালাসের সুযোগ বন্ধের মধ্যে নেই। কারণ আমি শ্রমিক কোথায় পাবো? তারা তো সব বাড়িতে চলে যাবে। গাড়ি যদি না পাই, কার্গো খালাস করে নেব কোথায়?’
এর আগে, গত (মে) মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনার কার্যক্রম টানা তিনদিন বন্ধ ছিল। এতে বন্দরে ৩৬টি জাহাজ আটকা পড়েছিল। সেই তিনদিনের চাপ সামাল দিতেই পুরো একমাস লেগেছে বলেও জানিয়েছেন বন্দর সচিব ওমর ফারুক।
সারাবাংলা/আরডি/এমও
অচলাবস্থা ঈদের ছুটি চট্টগ্রাম বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ