লক্ষাধিক মৎস্যজীবীর ঈদ আনন্দ অনিশ্চিত
৩ জুন ২০১৯ ১১:৫১
কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরে প্রাণিজ সম্পদ সুরক্ষায় এ বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন মহল।। কিন্তু এই পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট বেকার হয়ে পড়া কক্সবাজারের লক্ষাধিক মৎস্যজীবী।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, রমজান মাসে সমুদ্রে মাছধরা বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিকভাবে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই মুহূর্তে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের ঈদ আনন্দ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর তথ্য বলছে, মে মাসের শেষের দিক থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির প্রজননকাল। এ কারণেই সাগরের প্রাণিজ সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি ভাণ্ডার বাড়াতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এই তালিকায় সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
শহরের ফিশারিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের পাশাপাশি নদীর মোহনাও জারি করা এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সাগরে মাছ শিকারে ব্যবহৃত ফিশিং ট্রলার কক্সবাজারের উপকূলে অবস্থান করছে। মাছের পন্টুনে কোনো ধরনের মাছ কেনাবেচা না হলেও অনেক মৎস্যজীবীকে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। রমজানের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জনান তারা।
মোহাম্মদ লিয়াকত মিয়া নামে এক মৎস্যজীবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাছ শিকার বন্ধে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাটা এমন সময় দেওয়া উচিত হয়নি। কোনো ধরনের আয় রোজগার না থাকায় এই রমজানে খুবই কষ্ট পেতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত সন্তানদের জন্য ঈদের জামা কিনতে পারিনি।’
বোরহান উদ্দিন নামে আরেক মৎস্যজীবী বলেন, ‘মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। পুরো রমজান মাসে পরিবারের সদস্যদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারিনি। যে অবস্থা দেখছি, হয়তো ঈদ আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হব। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের সহযোগিতার কথা বলা হলেও তেমন কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহম্মদ জানান, সাগরে মূল্যবান মৎস্য সম্পদ ভাণ্ডার সুরক্ষায় সরকারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ফলপ্রসু। তবে জেলায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। দুই মাসেরও অধিক সময় বেকার হয়ে পড়া মৎস্যজীবীদের জন্য রেশনিংসহ বিভিন্ন সহায়তা প্রয়োজন। তা না হলে এই এলাকার মৎস্যজীবীরা ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আগে সমুদ্রে বিভিন্ন ধরনের বড়বড় মাছ পাওয়া যেত। যা এখন পাওয়া যায় না। এসব মাছের প্রজনন সময় শুরু হয়েছে। তাই ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’
ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যজীবীদের সহযোগিতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন নিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছেন। এছাড়াও অনিবন্ধিত রয়েছেন অনেকে। বেকার হয়ে পড়া মৎস্যজীবীদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা অথবা সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/প্রমা
৬৫ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ঈদ আনন্দ অনিশ্চিত বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মৎস্যজীবী মাছ শিকার