Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেলস্টেশনে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন ঈদ-যাত্রীরা


৩ জুন ২০১৯ ১৫:৪৪

ঢাকা: গাজীপুর যাওয়ার জন্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসেছেন কাওসার হোসেন। পথে পাশের ওভারব্রিজ থেকে নামার সময় তারকাটা লেগে হাতের তালু কেটে রক্ত ঝরছে তার। কাওসার স্টেশনে ঢুকেই চলে আসেন প্ল্যাটফর্মে। সেখানে অবস্থিত অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় চিকিৎসকরদের তৎপরতা। রক্তপাত বন্ধ করে হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেন তারা। সঙ্গে কিছু ওষুধ খাওয়ার পরামর্শও দেন।

হাসিমুখে হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে ট্রেনের দিকে পা বাড়ান কাওসার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, স্টেশনের ভেতরে এ ক্যাম্প না থাকলে আমাকে এখন বাইরে অন্য হাসপাতালে যেতে হতো। মেডিকেল ক্যাম্প থাকায় বাড়ি যাওয়া নিয়ে কোনো ঝামেলা হলো না।

বিজ্ঞাপন

কাওসারের মতোই আরেকজন হনুফা বেগম। ৪৭ বছর বয়সী এই নারী রেলস্টেশনের মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছেন গায়ে জ্বর নিয়ে। বললেন, হঠাৎ করেই আগের রাত থেকে হালকা জ্বর আসে। সকাল হতে হতে বাড়তে থাকে শরীরের তাপমাত্রা। কিন্তু বাড়ি যেতেই হবে। তাই নানা ঝামেলায় ডাক্তার না দেখাতে পেরেও চলে এসেছেন স্টেশনে। এসে প্ল্যাটফর্মে মেডিকেল ক্যাম্প দেখে যেন স্বস্তি পেয়েছেন।

কাওসার হোসেন ও হনুফা বেগমের মতো এমন আরও অনেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনের অস্থায়ী এই মেডিকেল ক্যাম্পের সেবা পেয়ে ভীষণ আনন্দিত। ঈদযাত্রার কঠিন শিডিউল মেলাতে গিয়ে অনেকেই হয়তো শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন না। তারাই এই ক্যাম্পে এসে পেয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ।

গত ৩১ মে থেকে রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ সারাদেশে এই মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তিন দিনের জন্য এই ক্যাম্প বসানো হলেও এবারে তা রাখা হচ্ছে পাঁচ দিন। ২৯ রোজা, অর্থাৎ ৪ জুন পর্যন্ত চলবে এই ক্যাম্পের কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যে ক্যাম্প করা হয়েছে, সেখানে আমরা খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের সাধ্যমতো যাত্রীসেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাত্রীরা যে ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসছেন, তার প্রায় সবই আমাদের পক্ষে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

কী ধরনের শারীরিক সমস্যা বা অসুস্থতার অভিযোগ বেশি পাচ্ছেন— জানতে চাইলে ডা. আতিকুল বলেন, রোজার সময় সাধারণত মাথা ঘোরানো, রক্তে শর্করা কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, বমি, জ্বর-ঠান্ডা, সর্দি-কাশির সমস্যাই বেশি পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় কেউ হয়তো স্টেশনে আসতে গিয়ে যা ট্রেনে উঠতে-নামতে গিয়ে পা পিছলে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত পান, ব্যাথা পান। তাৎক্ষণিকভাবেই এসব ব্যক্তিদের চিকিৎসা আমরা দিতে পারছি।

প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো রোগী এই অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন বলে জানালেন ক্যাম্পের চিকিৎসকরা। তারা জানান, অস্থায়ী এই মেডিকেল ক্যাম্পে রোস্টার ভিত্তিতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিস্টরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিনই দুই শিফটে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা, আবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে দায়িত্বে থাকেন চিকিৎসকরা। তাদের সঙ্গে থাকেন একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, আরেকজন মেডিসিন ক্যারিয়ার। সবাইকে নিয়েই একেকটি শিফটের টিম গঠন করা হয়।

টিমে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, সেবা দিয়ে ভালো লাগছে। কেউ সমস্যায় পড়লে আমাদের কাছে আসছেন, এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়।

মেডিসিন ক্যারিয়ার কুতুবে রাব্বানী বলেন, ঈদের এই সময়টাতে সবাই আনন্দ নিয়ে বাড়ি যায়। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাতে আনন্দে খানিকটা কমতি পড়েই। সেই কমতি যেন খানিকটা লাঘব করা যায়, সেজন্যই আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বিমানবন্দর রেলস্টেশন রেলস্টেশনে স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্যসেবা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর