গন্তব্য সদরঘাট-গাবতলী, পরিবহন সংকটে দিনভর ভোগান্তি
৩ জুন ২০১৯ ২১:০৪
ঢাকা: ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। কেউ কেউ তাই অফিসে হাজিরা দিয়েই বেরিয়েছেন, কেউ বেরিয়েছেন একটু আগেভাগে— ঈদযাত্রায় ছুটবেন বাড়ির পথে। যে আনন্দ নিয়ে একেকজন রওনা দিয়েছেন, পথে নেমেই সে আনন্দ উধাও। নেই পর্যাপ্ত বাস, সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছেন সিএনজি আর রিকশাচালকরা। নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ একে অন্যের সঙ্গে ‘শেয়ারে’ চলেছেন রিকশা-সিএনজিতে, কেউ কেউ তো রওনা হয়েছেন পদব্রজেই— একটু সামনে গিয়ে যদি কিছু একটা পাওয়া যায়!
সোমবার (৩ জুন) সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে না হতেই এমন চিত্র দেখা যায় রাজধানীজুড়ে। তাতে ঘরমুখী যাত্রীদের মধ্যে দেখা গেছে তীব্র ক্ষোভ। আর পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে চলাচলকারী অনেক বাসই এখন ঈদযাত্রীদের নিয়ে রওনা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। সে কারণেই রাজধানীতে পাবলিক বাসের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম।
আরও পড়ুন- বাড়ি ফিরতে স্বস্তি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে
রাজধানীর মহাখালী-তেজগাঁও, রামপুরা-বাড্ডা, কাকরাইল-শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘরমুখী বেশিরভাগ যাত্রীর গন্তব্যই সদরঘাট, গাবতলী কিংবা কমলাপুর। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এসে তারা পেয়েছেন ঈদের ছুটি। কিন্তু ঈদযাত্রার উদ্দেশে বাস, লঞ্চ বা ট্রেনে চড়তে টার্মিনালে যাওয়ার আগেই তারা পড়ছেন ভোগান্তিতে। কেবল ঘরফেরত মানুষই নয়, যারা কর্মসূত্রে বা বিভিন্ন কারণে যারা রাজধানীতেই আছেন, তারাও যাতায়াতে পড়ছেন সমস্যার মুখে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সাধারণ দিনগুলোর তুলনায় রাজধানীর সড়কে বাসের উপস্থিতি অনেক কম। এর মধ্যে আবার অনেক বাসই পরিণত হয়েছে ‘গেটলক’ সার্ভিসে। ফলে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে চড়তে পারছেন না বেশিরভাগ যাত্রীই।
বাস না পেলেও বিভিন্ন স্থানে সিএনজি ও রিকশার আধিক্য দেখা গেছে। তবে সেগুলোর ভাড়া যাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। যাত্রীরা বলছেন, দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া দিয়েও সিএনজি বা রিকশাকে রাজি করাতে পারছেন না কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। এর বাইরে রয়েছে মোটরসাইকেলও। সাধারণত এসব বাইক রাইড শেয়ারিং অ্যাপে চললেও এদিন কেউ অ্যাপে চলছেন না, যাত্রীর সঙ্গে দরকষাকষি করে ছুটছেন গন্তব্যে।
বাড্ডা থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে রিকশা করে রওনা করতে দেখা গেল শরিফুল ইসলামকে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি পাচ্ছিলাম না। সিএনজি পেলেও তিন-চার গুণ বেশি ভাড়া চায়। তাই রিকশাতে চড়েছি। অবশ্য রিকশাতেও ভাড়া বেশিই নিচ্ছে।
আরও পড়ুন- ‘ঘাটে এসেই ঈদ ঈদ লাগছে’
বরিশালগামী রানা জানান, সকালে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েই গিয়েছেন অফিসে। খানিকক্ষণ অফিস করেই বেরিয়েছেন। কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা কোনো যানবাহন পাননি। বাধ্য হয়ে সাড়ে তিনশ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলে চড়েছেন। এখন ভালোয় ভালোয় পৌঁছবেন— একুটুই প্রত্যাশা তার।
এদিকে, নাবিস্কো এলাকায় প্রায় শ’দুয়েক মানুষ অপেক্ষা করছিলেন গাড়ির জন্য। অনেকেই কিছুই পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যেই সেখানে এলো একটি পিকআপ। বেশ কয়েকজন আটকে ধরলেন। চালক রাজি হলেন সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা দিতে। সঙ্গে সঙ্গেই দলবেঁধে উঠে পড়লেন ১৫/২০ জন।
এদিকে, দুপুর আড়াইটার দিকে মৌচাক মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তাহমিনা হোসেন। ঈদ করবেন ঢাকায়। শেষ মুহূর্তে কিছু কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। ফিরবেন নর্দা এলাকার বাসায়। কিন্তু ঘণ্টাখানেক ধরেও কিছুই পাচ্ছেন না তিনি। ক্ষোভ জানিয়ে বললেন, ঈদে নাকি ঢাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। এদিকে আমরা গাড়িই পাচ্ছি না। সকালে আসতেও একইরকম ঝামেলা হয়েছিল। এখন দেখি, কিভাবে যেতে পারি।
ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে পাওয়া খবর বলছে, মহাসড়কে এবারের ঈদযাত্রা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই নির্বিঘ্ন। যে কারণে ঈদ-যাত্রীদের স্বস্তির খবরই দিচ্ছে গণমাধ্যমগুলো। কিন্তু শেষ বেলায় সম্পূর্ণ ফাঁকা হওয়ার প্রাক্কালে রাজধানীজুড়ে দেখা গেল গণপরিবহন নিয়ে তীব্র ভোগান্তি।
সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর