বিএনপি নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন
৩ জুন ২০১৯ ২১:৪৪
ঢাকা: ঈদের আনন্দ ছুঁয়ে যায় সবাইকেই। কিন্তু সেই আনন্দ সবার একরকম নয়। বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের ঈদ সবসময় একরকম হয় না। ক্ষমতায় থাকলে তাদের ঈদ যেমন হয়, ক্ষমতার বাইরে থাকলে ঈদের ধরন হয় অন্যরকম। টানা ১৩ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের ঈদ যেমন গত কয়েকবছর ধরে কাটছে নিরানন্দেই।
মামলা, জেল-জরিমানা, গ্রেফতার-হুলিয়ায় জর্জরিত দলটির নেতারা খুব একটা স্বস্তিতে ঈদ করতে পারেননি গত কয়েক বছর। এবারের প্রেক্ষাপট আরও নাজুক। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় মেনে নিতে হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারামুক্ত হতে পারেননি, রয়েছেন কারাগারেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত বছরগুলোর মতোই লন্ডনে। এমন পরিস্থিতিতে থাকছে না দলের পক্ষ থেকে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় আয়োজনও।
কিন্তু তারপরও থেমে থাকবে না বিএনপি নেতাদের ঈদ। ব্যথিত মন নিয়ে নিরানন্দ ঈদ করবেন তারা। দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। কেউ বা ঈদ করবেন ঢাকায়। কেউ আবার ঈদ ঢাকায় করে গ্রামে যাবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঈদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে হবে। কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য সেখানেই রাখা হয়েছে। তাকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের কথা শোনা গেলেও ঈদের আগে সেটি আর হচ্ছে না।
বিগত বছরগুলোর মতো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঈদ করবেন লন্ডনে। স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে ঈদ করবেন তিনি। ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার দুই মেয়েও ঈদ করতে পারেন তারেক রহমানের সঙ্গেই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদ করবেন ঢাকায়। ঈদের নামাজ শেষে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানে কবর জিয়ারত করতে যাবেন তিনি। সেখান থেকে বিএসএমএমইউতে যাবেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। ঈদের পরদিন যাবেন নিজ জেলা ঠাকুরগাঁয়ে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। ঈদের নামাজ শেষে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যাবেন তিনি। এরপর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে বিএসএমএমইউ যাওয়ার কথা রয়েছে তার। স্থায়ী কমিটির আরেক প্রবীণ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঈদ করবেন নির্বাচনি এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ঈদ করবেন ঢাকায়, ড. মঈন খান ঈদ করবেন নিজ এলাকা নরসিংদীর পলাশে, নজরুল ইসলাম খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ঈদ করবেন ঢাকায়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঈদ করবেন চট্টগ্রামে। বরাবরই তিনি চট্টগ্রামে ঈদ করে থাকেন। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ যথারীতি ঈদ করবেন ভারতে। অনুপ্রবেশের দায়ে ২০১৫ সাল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে আছেন তিনি। গত তিন বছরে ছয়টি ঈদ সেখানেই করতে হয়েছে তাকে। এবারও সেখানেই ঈদ করতে হবে তাকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। গুলশান জামে মসজিদের ঈদের নামাজ শেষে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করবেন তিনি। এরপর বাসায় নিজের নির্বাচনি এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মো. আব্দুল কাইয়ুম, ডক্টর শাহিদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঈদ করবেন ঢাকায়।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান (চট্টগ্রাম), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী), বরকত উল্লাহ বুলু (নোয়াখালী), মো. শাজাহান (নোয়াখালী), চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ (ফরিদপুর), মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ভোলা), অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান (টাঙ্গাইল), ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (ময়মনসিংহ), শামসুজ্জামান দুদু (চুয়াডাঙ্গা), উপদেষ্টা পরিষদের আবুল খায়ের ভূইয়া (লক্ষ্মীপুর), হেলালুজ্জামান তালকুদার লালু (বগুড়া), গোলাম আকবর খন্দকার (চট্টগ্রাম) যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার (বরিশাল), ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন (নোয়াখালী), খায়রুল কবীর খোকন (নরসিংদী), মিজানুর রহমান মিনু (রাজশাহী) নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন।
দেশের বাইরে ঈদ করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, ড. এম ওসমান ফারুক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আব্দুস সালাম। কারাগারে ঈদ করবেন যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, জাতীয়তাবাদী যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু।
তবে বিএনপি নেতারা যে যেখানেই ঈদ করুন না কেন, খুব একটা আনন্দঘন হচ্ছে না তাদের ঈদ। দলের চেয়ারপারসন কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রয়েছেন নির্বাসনে। দলের সুনির্দষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারছেন না নীতিনির্ধারকরা। একটা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে দলের ভবিষ্যৎ।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
ঈদুল ফিতর খালেদা জিয়া বিএনপি বিএনপি নেতাদের ঈদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর