ঢাকা-কুমিল্লা ‘হ্যাসেল ফ্রি’ যাত্রা
৩ জুন ২০১৯ ২২:৩২
ঢাকা–কুমিল্লা মহাসড়ক থেকে: জহিরুল ইসলাম। চাকরি করেন দেশের একটি স্বনামধন্য গ্রুপ অব কোম্পানিতে। থাকেন কর্মস্থল ঢাকায়। পরিবার থাকে নিজ শহর কুমিল্লায়। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে মাসে অন্তত তিন/চার বার কুমিল্লায় যেতে হয় তাকে। কিন্তু তার এই যাত্রা বেশিরভাগ সময়ই তিক্ত অভিজ্ঞার। ঢাকার আরামবাগ বাস কাউন্টার থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছাতেই যানজটে নাকাল হন তিনি। আর ঈদযাত্রায় তো কোনো কথাই নেই। দুই ঘণ্টার পথ পেরুতে সময় লাগে আট থেকে ১০ ঘণ্টা!
কিন্তু জহিরুল ইসলাম এবার এক স্বস্তিদায়ক বাসাযাত্রার গল্প শোনালেন এ প্রতিবেদককে। ঈদের ছুটিতে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য সোমবার (৩ জুন) দুপুরে আরামবাগ বাস কাউন্টারে যান জহিরুল ইসলাম। গিয়েই এশিয়া এয়ারকন বাসের টিকেট পান। টিকেটের জন্য না সিরিয়াল, না অপেক্ষা— কোনো বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি তাকে। সিটে বসার কিছুক্ষণ পরই বাস ছেড়ে যায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে— এমনটিই বক্তব্য জহিরুল ইসলামের।
আরও পড়ুন- ঈদযাত্রায় ‘জীবনবাজি’
শুধু জহিরুল ইসলাম-ই নন। এই রুটের বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে একই রকম ধারণা পাওয়া গেছে। ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করা বেশিরভাগ এসি বাস পূর্বনির্ধারিত ভাড়া ২৫০ টাকা করে টিকেট বিক্রি করেছে, যা অন্য বছরগুলোতে ৫০০ টাকার কমে পাওয়া যায়নি।
এশিয়া এয়ারকন এসি বাসের আরেক যাত্রী সাখাওয়াত হোসেন এই প্রতিবেদক বলেন, ‘বিগত ঈদগুলোতে কুমিল্লা যাওয়ার সময় বাস কাউন্টারে এসে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে টিকেটের জন্য। অনেক সময় নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ টাকা দিয়েও টিকেট মেলেনি। কিন্তু এবার সাধারণ দিনগুলোর সমান টাকাতেই টিকেট পাওয়া গেছে। টিকেটের জন্য কোনো সিরিয়ালে দাাঁড়তে হয়নি। ঈদের একদিন আগে এ ধরনের বাসযাত্রায় স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি।’
শুধু টিকেট আর ভাড়া নয়, যানজটমুক্ত সড়কে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে স্বাভাবিক সময়-ই লাগছে। অর্থাৎ সড়ক পথে মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুমিল্লা পৌঁছতে পারছেন ঘরে ফেরা মানুষগুলো। অন্য রুটে যাই ঘটুক না কেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবার ‘হ্যাসেল ফ্রি’ বা ঝঞ্ঝাটমুক্ত যাত্রা নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ— এমনটিই বক্তব্য ঘরমুখো যাত্রীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেঘনা-গোমতী নদীতে নির্মাণ করা দু’টি নতুন সেতু ঈদের আগে খুলে দেওয়ায় এ রুটের যানজট এখন শূন্যের কোটায়। কিছুদিন আগেও মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা ব্রিজের টোলপ্লাজার উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় যানজট থাকত। সেই যানজট এখন আর নেই। ব্রিজ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির ফলেই এই স্বস্তিদায়ক অবস্থা নিশ্চিত হয়েছে।
আরও পড়ুন- সময়সূচি মানছে না লঞ্চ, বেশি যাত্রী পেয়ে আগেভাগেই ছেড়ে যাচ্ছে
যানজটমুক্ত সড়ক কেবল সাধারণ যাত্রীর মনে স্বস্তি এনেছে, তা নয়। যানবাহনের চালক ও সহকারীদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা বলছেন, আগের ঈদগুলোতে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা লেগে যেত। সারাদিনে বড়জোর একটা ট্রিপ দিতে পারতেন তারা। এখন তারা দিচ্ছেন চার থেকে ছয়টা ট্রিপ। ফলে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।
এশিয়া এয়ারকনের সুপারভাইজার আতিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাস্তা যদি ফ্রি থাকে, বাস যদি ঠিকমতো চালাতে পারি, তাহলে বাড়তি ভাড়া কেন নেব? ঈদ এলেই যানজটে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সারাদিন রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েও আমাদের পোষায় না। এবার রাস্তা ফ্রি, নির্ধারিত ভাড়া নিয়েও আমাদের আয় স্বাভাবিক সময়ের মতোই হচ্ছে।’
আরও পড়ুন- গন্তব্য সদরঘাট-গাবতলী, পরিবহন সংকটে দিনভর ভোগান্তি
তবে সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, শুধু যানজটমুক্ত সড়কের জন্য নয়, বাস মালিকেরা পূর্বনির্ধারিত ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন মূলত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির ফলে। তাছাড়া দীর্ঘ ছুটির কারণে সড়ক পথে যাত্রীর চাপও অন্য বছরগুলোর তুলনায় কম। নাড়ির টানে ঘরে ফেরার জন্য এবার একটু বেশি সময়-ই হাতে পেয়েছে ঘরমুখো মানুষ। সব মিলে ঢাকা-কুমিল্লা রুটে যাত্রা হয়েছে হ্যাসেল ফ্রি।
ঝঞ্ঝাটমুক্ত এই যাত্রা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাসযাত্রী তৌহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় কোনো ঈদেই পূর্বনির্ধারিত ভাড়ায় কুমিল্লা আসতে পারিনি। আজ-ই প্রথম সেটা পেরেছি। দুই ঘণ্টার পথ দুই ঘণ্টাই লেগেছে। এটা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা।’
সারাবাংলা/এআর/এজেড/টিআর
ঈদযাত্রা ঢাকা-কুমিল্লা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হ্যাসেল ফ্রি ঈদযাত্রা