Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও জাতীয় ঈদগাহে জামাত সম্ভব


৫ জুন ২০১৯ ০০:১৭

ঢাকা: ২০১০ সাল। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু অবস্থায় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধান বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচাপতিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত স্থানটুকু বাদে গোটা প্যান্ডেলের ভেতরে ছিল পায়ের গোড়ালি সমান পানি। সেজদায় গিয়ে অনেকেরই কপাল ডুবে যায়।

নামাজ শেষে মিডিয়ার সামনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মুসল্লিরা। অখণ্ড ঢাকা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সমেবত মুসল্লিদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন এবং পরবর্তী ঈদের আগেই মাঠের আমূল সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। সে প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষাও করেন। মাঠের ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের পাশাপাশি বালু ফেলে খানা-খন্দ ভরাট করা হয়, ওজুর জন্য পানির লাইন তৈরি করে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

আজ থেকে ৯ বছর আগে কপাল ডুবিয়ে নামাজ পড়ার স্মৃতি সবচেয়ে বেশি মনে থাকার কথা ‘মেসার্স পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্স’ নামক প্রতিষ্ঠানটির। কারণ, সেবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্যান্ডেল তৈরির কাজ পেয়েছিল পুরান ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। ওই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা পুঁজি করে পরের ৯ বছর ধরে তারাই প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছেন। এবারও জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতের কাজ পেয়েছে তারাই।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সময়ের ব্যবধানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) খরচ করার সক্ষমতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মেসার্স পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্সের কাজের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতাও। ফলে ভিভিআইপিসহ প্রায় ৯০ হাজার মানুষ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যে প্যান্ডেল তারা তৈরি করেছেন, তা ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও ব্যবহার উপযোগী থাকবে— যদি না বাইরের পানি প্যান্ডেলের ভেতরে ঢোকে।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালে সেই কপাল ডোবানো ঈদ জামায়াতের দিন ঢাকায় কত মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল, সে তথ্য জানাতে না পারলেও আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, ঢাকার সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড ৩৪১ মিলিমিটার। ২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের রেকর্ড এটি।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিকে সাধারণত ভারী বর্ষণ বলে। এ ধরনের বর্ষণে ঢাকা শহরে ‘সাধারণ জলবদ্ধতা’ তৈরি হয়। সড়ক থেকে নিচু খোলা মাঠ বা ফাঁকা জায়গায় পানি জমতে পারে। সেই হিসেবে ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পানি জমার কথা।

কিন্তু জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুটের যে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে, সেখানে পানি জমার সম্ভবনা দেখছেন না প্যান্ডেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। কারণ, চারটি লেয়ারে তৈরি করা এই প্যান্ডেলের ত্রিপল, পলিথিন এবং সামিয়ানা ভেদ করে ওপর থেকে বৃষ্টি পড়া সম্ভব নয়। ৪১ হাজার ছয়শ বরাগ বাঁশ (প্যান্ডেলের কাঠামো তৈরিতে আড়াআড়িভাবে ব্যবহৃত স্থিতিস্থাপক বাঁশ) ও ১ হাজার ৮৮০টি খুঁটির (বাঁশ ও লোহার তৈরি) সাহায্যে নির্মাণ করা বিশাল আকৃতির এই প্যান্ডেল ভারী বর্ষণ বা ছোট-খাটো ঝড়ো হাওয়াও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে বৃষ্টির পানি না জমার আরও কিছু যুক্তি রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তারা বলছেন, চারটি লেয়ারে ভাগ করে নির্মাণ করা ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুটের প্যান্ডেলের পানি গড়িয়ে পড়বে যে আটটি পয়েন্টে, সেখানে রয়েছে উন্নত ডেনেজ ব্যবস্থা। বৃষ্টির পানি পড়লেই ড্রেন দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যাবে। তাই মাঠে পানি জমার সুযোগ নেই।

প্যান্ডেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পিয়ারু অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুষলধারে বৃষ্টি হলেও এই প্যান্ডেলের নিচে নামাজ পড়া সম্ভব। প্যান্ডেলের ভেতরে প্রবেশের পর বৃষ্টির পানিতে কারও মাথা ভিজবে না। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো থাকায় বাইরে থেকে আসা পানিও মাঠে জমার কথা না। তবে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের কথা তো বলা যায় না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদি টর্নেডো না হয়, তাহলে এই প্যান্ডেলের নিচে নামাজ আদায় করা কোনো সমস্য হবে না। ভারী বর্ষণেও এই প্যান্ডেলের নিচে ঈদ জামায়াত আয়োজন করা সম্ভব।’

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সারাদিনই হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। যেহেতু বর্ষাকাল, সেহেতু কোথাও একটু বেশি, কোথাও একটু কম বৃষ্টি হবে। তবে কত মিলিমিটার বৃষ্টি হবে, সেটি আগাম বলা যাচ্ছে না।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫০ জন শ্রমিক টানা ১৯ দিন কাজ করে বিশাল এই প্যান্ডেল তৈরি করেছেন। মুসল্লিদের আরামদায়ক নামাজ নিশ্চিত করতে সাতশ ফ্যান, ২ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট ম্যাট ও চাদর, ১ হাজার আটশটি টিউব লাইট স্থাপন করা হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে এই ময়দানেই বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

ঈদ জামাত জাতীয় ঈদগাহ প্রধান ঈদ জামাত

বিজ্ঞাপন

সিইসিসহ নতুন ৪ কমিশনারের শপথ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১০

আরো

সম্পর্কিত খবর