Saturday 05 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চোখে-মুখে ক্লান্তি, ভাড়ায় জিম্মি, ঈদে তবু বাড়ির ডাক


৪ জুন ২০১৯ ১৮:০৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে তিনটা। রাজধানী ঢাকায় অনেকেই গভীর ঘুমে বিভোর। কেউ কেউ হয়তো সেহরির আয়োজন শুরু করেছেন। তবে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে, চোখে-মুখে ক্লান্তি নিয়ে অনেকে ছুটছেন বাড়ির পথে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চানন তারা। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বাড়তি ভাড়ায় জিম্মি হয়েও বাড়ি ফেরার ইচ্ছা এসব যাত্রীর।

রাবেয়া বেগম তেমনি একজন। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল সাতটায় সাভারের ইপিজেড এলাকা থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে বাসে উঠেন তিনি। তার গন্তব্য বরিশালের চরমোনাই গ্রামের বোখায়নগর গ্রামে। নগরীর ব্যস্ততা ফাঁকি দিয়ে সকাল দশটার দিকে ঘাটে পৌঁছান রাবেয়া। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর লঞ্চে উঠে বিছানা বিছিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন লঞ্চের জন্য। কিন্তু ভাড়ার জোচ্চুরিতে লঞ্চ ছেড়ে চলে আসেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রাবেয়া বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘লঞ্চে উঠে বিশ মিনিটও হবে না। মানুষের ভিড়ে একটু জিরিয়ে (বিশ্রাম) নিচ্ছিলাম। কিন্তু কিছু সময় পর লঞ্চের কর্মচারিরা এসে বললো- বিছানা বিছিয়ে গেলে ৫ শ টাকা আর টিকেটের দাম দিতে হবে তিন শ টাকা। মোট ৮ শ টাকা করে আমাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনকে দিতে হবে ১৬ শ টাকা। এটা শুনে চোখ তো কপালে উঠার অবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘ভাই গার্মেন্টে কাজ করে দু-চার পঁয়সা কামায় কইরা (কাজ করে) যদি ওদেরকে অর্ধেক দিতে হয় তাহলে বাড়ি গিয়ে কি খামু? কি ঈদ করমু? অথচ মোটে ভাড়া হইলো দুজনের ৫ শ টাকা। কিন্তু তাদের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করা তো সম্ভব না। তাই উপায় না পেয়ে লঞ্চ থেকে নেমে গেলাম।’

রাবেয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘এরপর সারাদিন গেলো কোনো লঞ্চে উঠতে পারিনি এতো মানুষের ঠেলাঠেলির ভিড়ে। পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্বামীকে দেখিয়ে বলেন, তিনি দিনভর অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লঞ্চে উঠতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর পর গিয়ে লঞ্চ আসার খোঁজ নেন। কিন্তু ভিড়ের কারণে উঠতো পারি না তাই তিনি ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু আমার তো চোখে ঘুম নাই। বাড়ি যেতে পারলেই বাঁচি। শুনছি ভোর ৫ টার দিকে একটা লঞ্চ ছাড়বে। ওইটাই দেখি যাওয়া যায় কি না।’

এমন দুর্ভোগের কথা দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে জানাননি বলেন রাবেয়া।

গভীর রাতে সদরঘাটে এমন অবস্থা শুধু রাবেয়া বেগম কিংবা তার স্বামীর নয়। পটুয়াখালীগামী যাত্রী সুমনা-রফিক দম্পতি, চরফ্যাশনগামী কুলসুম আরার পরিবারসহ অসংখ্যা যাত্রীও একইভাবে নির্ঘুম আর ক্লান্তির রাত কাটাচ্ছেন গন্তব্যে ফেরার আশায়।

দেড় বছরের শিশু, দুই মেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে গলাচিপার উদ্দেশ্য টঙ্গী থেকে সদরঘাটে এসেছেন সীমা আক্তার। আসার পর তিনটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে চোখের সামনে দিয়ে। কিন্তু কোলের শিশু ও দুই মেয়েকে নিয়ে ভিড়ের মাঝে ঝুঁকি নিতে চাননি তিনি। তাই ভিড় কমার অপেক্ষায় আছেন সীমা। তবে তারও সহ্যের বাঁধ ভাঙছে। সীমা ক্লান্তির হায় তুলে সারাবাংলাকে বলেন, যত অপেক্ষা করছি ততই মানুষের ঠেলাঠেলি আরও বাড়ছে। তাই এবার লঞ্চ আসলে স্বামীকে বলেছি যেভাবেই হউক উঠবো।

তবে সদরঘাটে যাত্রীদের কেউ কেউ সৌভাগ্যবান। কাঙ্ক্ষিত লঞ্চ পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা। হাসিমুখে তারা যাচ্ছেন চেনা বাড়ির পথে।

লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভোগান্তি বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক (পরিবহন) মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা এখনও যাত্রীদের কোনো অভিযোগ পাইনি। যাত্রীরা যদি মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে লঞ্চে যাত্রীদের ভিড়ের বিষয়টি মাথায় রেখে পর্যাপ্ত যাত্রী দ্বারা পরিপূর্ণ হলেই লঞ্চ ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়া আছে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/এসএইচ/ এনএইচ

ঈদযাত্রা লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর