‘অনিশ্চিত’ ঈদযাত্রায় নিম্ন আয়ের মানুষ
৪ জুন ২০১৯ ২০:১৮
ঢাকা: চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ, মাঝখানে কেবল একটা রাত। অথচ এখনও বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ। বিশেষত উত্তরবঙ্গে ফেরার কোনো বাসই মিলছে না। মঙ্গলবার (৪ জুন) রাজধানীর গাবতলীর বাসস্ট্যান্ড ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।
বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত যাত্রীরা জানান, দিগুণ ভাড়া দিয়েও বাসের কোনো টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। কখন গাড়ি মিলবে তা কাউন্টারের লোকেরাও বলতে পারছে না। বাড়ি ফিরে সময়মতো ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
বগুড়ার আমজাদ হোসেন। ওয়াসার পানির লাইন মেরামত করা এই শ্রমিক গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন সকাল ৮টায়। দিগুণ ভাড়া দিয়েও দুপুর তিনটা পর্যন্ত বাসের কোনো টিকেট পাননি। সারাবাংলাকে আমজাদ বলেন, ‘দোতলা একটা বাস পেয়েছিলাম, কিন্তু বগুড়ায় যেতে সেটায় দ্বিগুণ সময় লাগবে। আল্লাহ জানেন বাড়ি গিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে পারবো কিনা।’
শুধু আমজাদ নয়, ঈদে বাড়ির পথে রওয়ানা দেওয়া দিনমজুর, শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের সবারই একই অবস্থা। অনিশ্চয়তা নিয়েই বাসের অপেক্ষায় বসে আছেন রাস্তা কিংবা বাসস্ট্যান্ডে।
কোলারবাগ এলাকার মহিলা হোস্টেলের কর্মী দিয়ার আলী। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে ঈদ করতে যাচ্ছেন। সারাবাংলাকে দিয়ার বলেন, ‘শিউর ছিলাম না, বেতন পাবো কি পাবো না। তাই শেষ মুহূর্তে বেতন পাওয়ার পর বাসস্ট্যান্ডে আসছি। টিকেটই পাচ্ছি না, গাড়ি নেই। কখন ফিরতে পারবো জানি না।’
নওগাঁর দিনমজুর নিড়েন। রাস্তার কাজ করতে দলবলে গিয়েছিলেন মাদারীপুর। সপ্তাহখানেক কাজ করে এখন ঈদ করতে বাড়ি ফিরছেন। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে কথা হলে নিড়েন বলেন, ‘গ্রামে যাবো। মাদারীপুর থেকে এসে সকাল ১১টায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে নেমেছি। অপেক্ষা করছি কোন বাসে কম টাকায় যাওয়া যাবে। সব বাসেই বেশি টাকা চাচ্ছে।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শরিফ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের বাস নেই। বগুড়ার বাসে করে যাবো। তুলনামূলক বেশি ভাড়া নিচ্ছে। কিন্তু টিকেট পেয়েছি। এখন বাসের জন্যে অপেক্ষা করছি, কিন্তু কেউই বলতে পারছেন না বাস কখন আসবে।’ একই কথা জানান গাইবান্ধার যাত্রী লিটন।
মাদারটেক এলাকায় রঙমিস্ত্রির কাজ করা জুলফিকার আলী বলছিলেন, ‘মাদারটেক থেকে অন্য সময় আসতে ১০০ টাকা লাগে। ভেঙে ভেঙে এখন ২০০ টাকা দিয়ে এখানে এসেছি। টিকেট পেলেও কখন ফিরতে পারবো তা বুঝতে পারছি না।’
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রাজীব হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন যাত্রীদের চাপ কম, তবে সকালে বেশ চাপ ছিল। আর দুপুর পর্যন্ত রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে স্ট্যান্ডে গাড়ি সংকট দেখা দিয়েছে। তবে রাতে আমাদের গাড়ি রয়েছে।’
বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ বিষয়ে তিনি জানান, আমরা বেশি ভাড়া আদায় করছি না। অন্য সময় বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম রাখি। এখন বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়াই রাখছি। ঈদ উপলক্ষে ৫০০ টাকার ভাড়া ৫৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। এ কারণেই হয়তো অনেকে অভিযোগ করছে বলে জানান তিনি।
গাবতলী ছাড়াও রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে বিকালেও ঘরমুখী মানুষের ভিড় রয়েছে। মহাখালী বাস টার্মিনালের উল্টো পাশের রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় নিম্ন আয়ের মানুষের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। আর বাস টার্মিনালে সবচেয়ে ভিড় রয়েছে এনা কাউন্টারে। টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জগামী যাত্রীদের।
নাবিস্কোর মূল সড়কেও বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের বসে থাকতে দেখা গেছে। কল্যাণপুর ও শ্যামলীর বিভিন্ন কাউন্টারে অগ্রিম টিকেট কেটে রাখা যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন গন্তব্যে পৌঁছাতে।
অন্যদিকে, গাবতলী বাস টার্মিনালে দুপুরে ভিড় কম থাকলেও বিকাল থেকেই তা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন এলাকার যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে সংকট রয়েছে বাসেরও। ঢাকার অভ্যন্তরে চলাচল করে এমন বাসেও লোকজন ছুটছে গ্রামের টানে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও