ঈদের আগের শেষ কেনাকাটা, তবুও বিক্রি নেই ঈদ আনন্দ মেলায়
৪ জুন ২০১৯ ২২:২৮
ঢাকা: বেইলি রোডে উইমেনস ক্লাব মাঠে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে চলছে সপ্তাহব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলা। রহিমা বুটিক্স আয়োজিত এই মেলায় মোট ৪২টি স্টলে পাওয়া যাচ্ছে হাতের কাজের থ্রি-পিস, টু-পিস, রেডিমেড জামা, জামদানি শাড়ি, ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট, চামড়াজাত পণ্য ও গয়নাসহ নানা ধরনের পণ্য। কিন্তু ঈদের আগের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় তেমন ভিড় নেই এই মেলায়।
২৯ মে থেকে শুরু হওয়া এই মেলার শেষ দিন ছিল আজ মঙ্গলবার (৪ জুন)। আয়োজকদের আশা ছিল, ঈদের ঠিক আগে আগে এই মেলায় সাড়া মিলবে ক্রেতাদের। কিন্তু তাদের সে আশার গুড়ে বালি। বিভিন্ন বয়সী মানুষ এই মেলায় ঢুঁ মারছেন, ঘুরেফিরে দেখছেন বিভিন্ন স্টল। কেউ কেউ এটা-ওটা কিনছেনও, কিন্তু বেশিরভাগই স্টলগুলো ঘুরে-ফিরে দেখে চলে যাচ্ছেন। সে কারণে হতাশাও ঝরছে আয়োজক ও মেলায় অংশ নেওয়া স্টল মালিকদের কণ্ঠে।
সারাবছর দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন মেলায় অংশ নেন নুসরাত জাহান সোনিয়া। রঙ-বেরঙ নামের তার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে নানারকম গয়না। এবারের মেলার বিক্রি নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট না। স্কুলের ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরাই তাদের মূল ক্রেতা। কিন্তু স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার বেচা-বিক্রি তেমন নেই বলে জানান আঁখি। সব অর্থনৈতিক শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য পণ্যের পসরা সাজালেও আশানুরূপ ক্রেতা সমাগম ঘটেনি বলে জানান তিনি।
ফ্যাশন ট্রেন্ডস বুটিকের মালিক বকুল আকতার আট থেকে ৯ বছর ধরে পোশাকের ব্যবসা করেন। তিনি বললেন, এখানে সারাবছরই কোনো না কোনো মেলা হয়। তিনি সবসময় অংশ নিয়ে থাকেন। তার কাছে দেশি-বিদেশি নানারকম পোশাক পাওয়া যায়। জানালেন, ঈদের বেচাবিক্রি তেমন ভালো না এবার। বেইলি রোডের আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাই তার নিয়মিত ক্রেতা। ১৫ রোজায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিয়মিত ক্রেতারা আসছেন না। এরপরও যেটুকু বিক্রি হচ্ছে, তাদের ঈদ পোশাকে সুতি ও সিল্কের চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।
শপিং মল বা অন্যান্য মার্কেট থাকার পরও ক্রেতারা এই মেলায় কেন আসবেন— জানতে চাইলে বকুল বলেন, তাদের জিনিসের কোয়ালিটি ভালো। যারা সারাবছর কেনে, তারাই বারবার আসে। অনেকেই এসে একবারে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার কাপড় নিয়ে যান। শোরুম থেকে কম দামে কাপড় পাওয়া যায়, সেটাও একটা কারণ বলে মনে করেন তিনি। তার এখানে ৬০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকার পোশাক পাওয়া যায়।
শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন আঁখি। একবছর ধরে বুটিকের ব্যবসা করছেন তিনি। মেলায় এবছরই প্রথম অংশ নিলেন। তার কাছে মূলত নানারকম জামদানি পাওয়া যাচ্ছে। এসব জামদানি তিনি ডেমরা থেকে আনেন বলে জানালেন। বললেন, মেলায় বিক্রি ভালোই হচ্ছে। ক্রেতারা দেশি পণ্য বেশ আগ্রহ নিয়ে কেনেন। এখানে ডিজাইনভেদে জামদানি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।
এআর ফ্যাশন নামে একটা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আছে আঁখির। অনলাইনেও পোশাক বিক্রি করেন তিনি। তবে অনলাইন থেকে মেলায় তার বিক্রি ভালো হলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে জানালেন তিনিও।
মনোয়ারার সন্তান বেইলি রোডের এক স্কুলে পড়ে। প্রতিবার তিনি ক্রেতা হিসেবে মেলায় আসেন। এবার তিনি নিজেই বিক্রেতা। চারদিকে মেয়েদের পোশাক ও গয়নাগাটির ভিড়ে ছেলেদের পোশাকের স্টল দিয়েছেন মনোয়ারা। ছেলেদের পোশাকের দোকান বেশি না থাকার পরেও তার বিক্রি মোটামুটি বলে জানান মনোয়ারা।
পুরাতন কচুক্ষেতের চামড়াজাত পণ্যের দোকান এমএমডি। তারাও এবারই প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছেন এই ঈদ মেলায়। চামড়ার তৈরি জুতা, ব্যাগ ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে এখানে। দোকানে ছিলেন বিক্রকর্মী শিমুল। একমাত্র চামড়াজাত পণ্যের দোকানটিতে বেচাবিক্রি মটামুটি হচ্ছে বলে জানান তিনি। চামড়ার তৈরি এসব জুতা পাওয়া যাচ্ছে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।
অনন বুটিকসের শাহীন বসেছেন হাতে বানানো কুশন কাভার, বাচ্চাদের পোশাক ইত্যাদি নিয়ে। খুলনা থেকে তৈরি করিয়ে আনেন এসব পণ্য। বললেন, ঈদের সময় পোশাক আর গয়নাগাটির ভিড়ে মানুষ প্রচুর বাচ্চাদের কাপড় আর কুশন কাভার কিনেছেন। প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নিয়েই বেচাবিক্রি নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। কুশন বিক্রি হচ্ছে তিনশ থেকে একহাজার টাকায়।
এক কোণে খাঁটি মধু নিয়ে বসেছেন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ বি কে রায়। চাকরি করেছেন যশোরের নোয়াপাড়ার বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের ইন চার্জ হিসেবে। চাকরি সূত্রে সেখানে থাকার সময়েই এক মধু বিক্রেতার কাছ থেকে খাঁটি মধু কিনতেন। সেখান থেকেই মধু এনে বিক্রি করছেন তিনি। দিনাজপুর থেকে আনা লিচুফুলের মধুও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের কেউ কেউ তার কাছ থেকে মধু কিনছেন। বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন মধুর দাম কমিয়ে সব ধরনের মধুই প্রতি কেজি ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
নানারকম গয়না সাজিয়ে বসেছেন নীলা। জানালেন বিক্রি মোটামুটি। গরম আর বৃষ্টির জন্য বিক্রি কিছুটা কম বলে জানালেন তিনি। আবার মানুষ আজকাল অনলাইনেও কেনাকাটা সেরে ফেলে। তাই গরমের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে বাইরে যেতে চান না অনেকেই বলে মনে করেন তিনি।
আরেক গয়নার দোকানের বিক্রয়কর্মী মুন্না বলেন, এবার নানারকম কানের দুল আর ব্রেসলেটের বিক্রি বেশি। মূলত জার্মান সিলভারের গয়না পাওয়া যাচ্ছে তাদের স্টলে। কিন্তু মেলায় সেভাবে ক্রেতা সমাগম নাই বলে জানান তিনি।
গ্লোরিয়াস ফ্যাশন নামক গয়নার দোকান নিয়ে মেলায় এসেছেন রুনা। তরুণীরা এবার অক্সিডাইজড ঝুমকা বেশি কিনছেন বলে জানান তিনি। প্রচুর ঝুমকা বিক্রি হলেও কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না কেনার প্রবণতা এবার কম বলে জানান রুনা।
মেলায় গয়না দেখছিলেন লিমা। কাছেই থাকেন, তাই এই মেলায় মাঝেমধ্যেই আসেন তিনি। মেলা থেকে থ্রি-পিস আর গয়না কিনেছেন তিনি। অন্যান্য শপিং মল রেখে এই মেলায় কেন আসেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে সব ধরনের জিনিস এক জায়গায় পাওয়া যায়। তাছাড়া দামটাও হাতের নাগালে। বিশেষত নানারকমক ডিজাইনের গয়নার দাম হাতের নাগালের মধ্যে পাওয়ার জন্য তিনি এখানে আসেন।
শ্বাশুড়ির জন্য শাড়ি কিনতে বেইলি রোডে এসেছেন ইয়াসমিন। এক আত্মীয়ার কাছে এই মেলার কথা শুনেছেন, তাই আজ ঘুরতে এসেছেন। ঈদের কেনাকাটা শেষ হলেও মেলা থেকে কয়েকটা কানের দুল কিনতে চান তিনি।
ঈদের কেনাকাটা মোটামুটি শেষ। শেষ মুহুর্তে গয়নাগাটি এবং অন্যান্য অ্যাকসেসরিজের কেনাবেচা ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু অন্যান্য মার্কেট বা বুটিক শপের তুলনায় দাম কম হলেও তেমন একটা ক্রেতা নেই বেইলি রোডের ঈদ আনন্দ মেলায়। সে কারণেই সাত দিনের এই মেলায় অংশ নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্টির কথা জানাতে পারলেন না বিক্রেতারা।
সারাবাংলা/আরএফ