ঈদের জ্যামে বঙ্গবন্ধু সেতুতে বিশ্বকাপের আমেজ
৫ জুন ২০১৯ ০০:২৬
ঢাকা: ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে জেলাগুলোর যাতায়াতের অন্যতম প্রধান রুটে যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু পেরোতেই হয় সবাইকে। তাই কেবল ঈদে নয়, সারাবছরই এই সেতুতে থাকে যানবাহনের তীব্র চাপ। সেই বঙ্গবন্ধু সেতুতেই কি না খেলা হচ্ছে ক্রিকেট ম্যাচ!
ঠিক এমন চিত্রই মঙ্গলবার (৪ জুন) দেখা গেল বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর। একজন ব্যাট করছেন, একজন করছেন বল। ব্যাটসম্যানকে ঘিরে রেখেছেন ফিল্ডাররা। ঠিক অফিশিয়াল ক্রিকেট ম্যাচ নয়, অলিগলিতে যেমন যেকোনো মুহূর্তে কিশোররা নেমে পড়েন ব্যাট-বল হাতে নিয়ে, ঠিক তেমন একটি ক্রিকেট ম্যাচের ছবি যেন। পাশের লেনেই কিন্তু সারি সারি গণপরিবহন। কিন্তু দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই সেতুর ওপর আচমকা এমন ক্রিকেট ম্যাচের উদয় কিভাবে!
জানা গেল, ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে যানজটে যমুনা সেতুর ওপর আটকা পড়েছিলেন পাবনাগামী কিছু যাত্রী। এদিকে ইংল্যান্ডে চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর, যেখানে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টাইগাররা জানান দিয়েছে, এই বিশ্বকাপে তারা খেল দেখাবে! সেই নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখনই তাদের মাথায় আসে— হয়ে যাক না একটা ক্রিকেট ম্যাচ! যে ভাবা, সেই কাজ।
২৮ রমজান বিকেল পর্যন্ত ঢাকা থেকে গ্রামমুখী মানুষের ঈদযাত্রা বেশ নির্বিঘ্নই ছিল। দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ঠিকঠাক সময়মতোই পৌঁছেছেন যাত্রীরা। এদিন বিকেলের পর থেকে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। সেই গত কয়েকবছরের মতোই ৪/৫ ঘণ্টার দূরত্বের গন্তব্যে যেতে তাদের সময় লাগতে থাকে ১০/১২ ঘণ্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি। এমনই ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন পাবনার রাধানগরের ইমরুল কায়েস।
সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে ইমরুল জানান, সোমবার (৩ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে রওনা হন তারা। গন্তব্য পাবনা। এলাকার বেশ কয়েকজন ঢাকায় থাকেন। সবাই মিলে একটি মাইক্রোবাসে চড়ে রওনা দেন। এর আগে অনেকেই এবার নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরেছে শুনে ভেবেছিলেন, ভোর নাগাদ সবাই পৌঁছে যাবেন স্বজনদের কাছে।
তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। টাঙ্গাইল শহরে ঢোকার আগেই করটিয়া এলাকায় গিয়ে জ্যামে পড়েন ইমরুল ও তার সঙ্গীরা। তখন সেহেরির সময় হয়ে গেছে। প্রায় একঘণ্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন এক জায়গায়। পরে সেখান থেকে গাড়ি ছাড়লেও যমুনা সেতুতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে যায় ভোর সাড়ে ৬টা। আর ওই সেতুর ওপরেই তাদের আটকে থাকতে হয় দুই-সোয়া দুই ঘণ্টা!
ইমরুল বলেন, সেতুর ওপর আমরা দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে আটকে ছিলাম। গাড়ি নড়েও না, চড়েও না। এর মধ্যেই বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছিল। পাশের এক গাড়ির যাত্রীর কাছে দেখি ব্যাট-বল আছে। পরে আমরা ভাবলাম, জ্যামে বসে না থেকে কিছু না কিছু করা ভালো। আমরা বরং সেতুর ওপর একটু ক্রিকেট খেলি। পরে ওই লোকের কাছ থেকে ব্যাট-বল নিয়ে নেমে পড়ি খেলতে।
ইমরুলের সঙ্গে যারা খেলতে নেমেছিলেন, তারা সবাই তাদের ওই মাইক্রোবাসেরই সহযাত্রী, সবার বাড়িই পাবনাতে— কারও শহরে, কারও বেড়া উপজেলায়, কারও চাটমোহর উপজেলায়।
ইমরুলরা যখন খেলছিলেন, তখন সেতুর একটি পাশ একদম ফাঁকা, অন্য পাশে কিন্তু সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে। এসব যানবাহনে আটকে থাকা যাত্রীরা বেশ উৎসাহের সঙ্গেই খেলা দেখতে শুরু করেন। কেউ কেউ ছবি তুলে ছড়িয়ে দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তা আলোচনায় আসতে সময় লাগেনি।
ইমরুল বললেন, সবাই এত আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখছে, সেটা তখন বুঝিনি। আসলে আমাদের মাথায় তখন ছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। অন্য কিছু ভাবার সুযোগ হয়নি। বিশ্বকাপের আমেজটাই কাজ করছিল। তাতে জ্যামের ভোগান্তিটাও ভুলে গিয়েছিলাম।
ইমরুল আরও বলেন, আমাদের সড়কে যেহেতু এখনো খানিকটা অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে, তাই ঈদের যানজট একরকম মেনেই নিয়েছি। আমরা ধরেই নিয়েছি, এসময় কিছুটা কষ্ট হবেই। সে কারণেই এসব ভুলে গিয়ে আমরা খেলায় মনোযোগী হই। ভাবিনি, তাতে সবার মনোযোগটা এভাবে পেয়ে যাব।
শেষ পর্যন্ত যানজট ছাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পেরোতে পেরোতে সকাল ৯টা বেজে যায় ইমরুলদের। আর সব ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে যখন বাড়ি পৌঁছান, তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। প্রায় ১৫ ঘণ্টার ঈদযাত্রা তাদের।
বাড়ি পৌঁছে পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ নিশ্চয় খুঁজে পেয়েছেন ইমরুল কায়েস। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ক্রিকেট খেলার মুহূর্তগুলো যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই মনোযোগ নিশ্চয় বাড়তি তৃপ্তিও দিচ্ছে তাকে।
ছবি: ইমরুল কায়েসের কাছ থেকে পাওয়া।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর