জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে একযোগে কাজ করবে ঢাকা-হেলসিংকি
৫ জুন ২০১৯ ১২:২৭
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ইস্যুতে একযোগে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সৌলি নিনিয়েসটোর বৈঠকে এ বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জোরালো সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
বৈঠকে পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম।
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র এক মিটার বাড়লেই বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিল গড়ে তোলার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার বিষয়টি ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাগরের জলের উচ্চতা বাড়লে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি উদ্বেগ জানান। তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমাতে বৈশ্বিক আবহাওয়াজনিত সতর্কবার্তা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ফলে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়াটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। তাছাড়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি হলেও দেশটি নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বেগের কথা জানান।
ফিনল্যান্ড প্রেসিডেন্টের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাশে আশ্রয় দেওয়ার পরও দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— এই পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বাসী এবং প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ সুসম্পর্ক রেখে চলছে।
বৈঠকে দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সদ্য গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছে জানিয়ে ফিনল্যান্ডের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সারাদেশে একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ফিনল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা চাইলে এখানে তাদের নিজস্ব একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও গড়ে তুলতে পারে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দ্রুততম সময়ে স্বীকৃতি দেওয়ায় ফিনল্যান্ডের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ফিনল্যান্ড সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ কারণে আমরা ফিনল্যান্ডের প্রতি কৃতজ্ঞ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বৈঠকে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পাশাপাশি আন্তর্জানিত অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) উপমহাপরিচালক পদে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হককে নির্বাচিত করার জন্য ফিনল্যান্ডের সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
বৈঠকের শুরুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট সৌলি নিনিয়েসটো তাকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ভবনের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন বলে সাংবাদিকদের জানান নজরুল ইসলাম।
পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সোমবার (৩ জুন) ফিনল্যান্ড পৌঁছান শেখ হাসিনা। ফিনল্যান্ড সফর শেষে ভারত হয়ে দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার।
শেখ হাসিনা এর আগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) ১৪তম সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদি আরব সফর করেন। সফরে এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি পবিত্র ওমরাহ পালন করেন তিনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ মে জাপান পৌঁছান। সেখানে জাপানি সম্প্রচারমাধ্যম নিকেই’র আয়োজনে ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। পরে ৩১ মে সৌদি আরব পৌঁছান তিনি। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর
জলবায়ু পরিবর্তন ঢাকা-হেলসিংকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সৌলি নিনিয়েসটো মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকট